বালকাণ্ড বা আদিকাণ্ড ও উত্তরকাণ্ড এই দুটি কাণ্ডকে রামায়ণের প্রক্ষিপ্ত অংশ বলে মনে করা হয়। যে সকল কারণে এই দুটি কাণ্ডকে রামায়ণের প্রক্ষিপ্ত অংশ বলা হয় সে সম্পর্কে আলোচনা।
রামায়ণের প্রক্ষিপ্ত অংশ সম্পর্কে আলোচনা
প্রশ্ন:- রামায়ণের প্রক্ষিপ্ত অংশ সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর:- সাতটি কাণ্ডে বিভক্ত রামায়ণকে আমরা যে আকারে পাই সেটাই রামায়ণের মূল রূপ কি না এবং তা একই কবির রচনা কি না এ বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। আধুনিক পণ্ডিতদের মতে রামায়ণের আদি ও সপ্তম কাণ্ড পুরোপুরি প্রক্ষিপ্ত বা সংযোজিত। তাদের এই সিদ্ধান্তের পিছনে অনেক যুক্তি রয়েছে, তার মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখযোগ্য যুক্তি হল-
- (১) আদি ও সপ্তম কাণ্ডে রামচন্দ্র হলেন বিষ্ণুর অবতার। কিন্তু বাকি পাঁচটি কান্ডে দেখা যায় যে তিনি একজন আদর্শ, অমিতকামী মানুষ।
- (২) এই দুই কান্ডের রচনাশৈলী ও ভাষা অপর পাঁচটি কান্ডের তুলনায় নিম্নমানের।
- (৩) বালিদ্বীপে প্রাপ্ত রামায়ণে উত্তরকাণ্ডের উল্লেখ নেই।
- (৪) প্রথম কাণ্ডে যেসব কথা বলা হয়েছে, অন্য পাঁচটি কাণ্ডের মধ্যে কোথাও তার উল্লেখ বা সমর্থন তো নেই-ই, উপরন্তু তার বিরোধিতা বা বৈপরীত্য লক্ষ্য করা যায়।
- (৫) প্রথম সূচি অনুসারে উত্তরকাণ্ডে সীতা নির্বাসনরূপ কোনো ঘটনার উল্লেখ নেই। কিন্তু দ্বিতীয় সূচিতে এই ঘটনার উল্লেখ থাকায়, মনে হয় উত্তরকাণ্ডের যোজনা পরবর্তীকালে হয় এবং তারপরেই দ্বিতীয় বিষয়সূচিতে সন্নিবেশ ঘটে।
- (৬) আদিকাণ্ড ও উত্তরকান্ড বাল্মীকিকে রামচন্দ্রের সমকালীন কবিরূপে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু মূল রামায়ণের বাল্মীকি এক পৌরাণিক ব্যক্তিত্ব।
- (৭) রামায়ণের দ্বিতীয় থেকে ষষ্ঠ কাওগুলির নামকরণ করা হয়েছে বিষয়বস্তু অনুসারে। যেমন অযোধ্যাকাও, অরণ্যকাণ্ড প্রভৃতি। কিন্তু প্রথম ও শেষ কাণ্ডের নাম ‘আদি’ ও ‘উত্তর’ কাণ্ড বিষয়বস্তু অনুসারে হয়নি।
উপরি উক্ত কারণগুলির জন্য আদি ও সপ্তম কাণ্ডকে রামায়ণের প্রক্ষিপ্ত অংশ বলে মনে করা হয়।