‘ভারতবিবেকম্’ নাট্যাংশ অবলম্বনে রামকৃষ্ণদেবের চরিত্র

উচ্চমাধ্যমিক একাদশ শ্রেণীর সংস্কৃত নাট্যাংশ থেকে ‘ভারতবিবেকম্’ নাট্যাংশ অবলম্বনে রামকৃষ্ণদেবের চরিত্র বিশ্লেষণ করা হল।

‘ভারতবিবেকম্’ নাট্যাংশ অবলম্বনে রামকৃষ্ণদেবের চরিত্র বিশ্লেষণ

প্রশ্নঃ- ‘ভারতবিবেকম্’ নাট্যাংশ অবলম্বনে রামকৃষ্ণদেবের চরিত্র বিশ্লেষণ করো।

ভূমিকাঃ- বিংশ শতাব্দীর স্বনামধন্য নাট্যকার ড. যতীন্দ্রবিমল চৌধুরী বিরচিত ‘ভারতবিবেকম্‘ বারোটি দৃশ্যের একটি নাটক। নাটকটি স্বামী বিবেকানন্দের জীবনের প্রথমার্ধের ঘটনা নিয়ে রচিত। এই নাটকের প্রথম দৃশ্যের অন্তর্গত একটি অংশের নাম “শ্রীরামকৃষ্মেন সহ শ্রীনরেন্দ্রস্য সাক্ষাৎকারঃ।” এই সাক্ষাৎকারের মধ্যে দিয়ে শ্রীরামকৃষ্ণদেবের চরিত্রের যে বৈশিষ্ট্যগুলি ফুটে উঠেছে সেগুলি নীচে আলোচনা করা হল-

অতুলনীয় মাতৃভক্তি

রামকৃষ্মদেবের ছিল অতুলনীয় মাতৃভক্ত। তাঁর ভক্তিতে কোনো কৃত্রিমতা নেই। তিনি নিজে মায়ের বহু গান জানেন। বহুরূপে তাঁকে আরাধনা করেন। কখনও তাঁর মা সাধুজনদের গভীর সাধনায় প্রেরণা দেন, কখনোবা শতশত ভক্ত সন্তানের কল্যাণের প্রতিবন্ধকতা দূর করেন। অন্যের কন্ঠেও মায়ের স্তুতি শুনতে রামকৃষ্মদেবের খুব ইচ্ছা। তাই তিনি সুরেন্দ্রনাথকে তাঁর বাড়ির কাছাকাছি ভালো গান জানে এরকম কোনো যুবক থেকে থাকলে তাকে নিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করেন।

দুঃখ মোচনের জন্য চিন্তা

রামকৃষ্মদেবকে আমরা অবতার বলেই জানি। তিনি মায়ের কাছে দেশের জগতবাসীর দুঃখদুর্দশা দূর করার জন্যই প্রার্থনা করেন। যে রূপে মা শত শত কল্যাণমূলক কাজের বাধা দূর করেন, মায়ের মমতাঘন দৃষ্টি দেখতে ব্যাকুল ভক্তদের আকাঙ্ক্ষা মেটান এবং অকারণে কৃপা বর্ষণ করেন। শ্রীরামকৃষ্ণদেব মায়ের এই রূপই প্রত্যক্ষ করেন।

উত্তরসাধককে পাওয়ার জন্য ব্যাকুলতা

রামকৃষ্ণদেব ছিলেন খুব বাস্তববাদী। জগতের শত শত দুঃখে তিনি কাতর। কিন্তু তিনি একা তো এ দুঃখের অবসান ঘটাতে পারবেন না। তাই মাকে জানাচ্ছেন, তিনি অনেক সাধনা আয়ত্ত করেছেন কিন্তু উত্তরসাধক না পেলে সেগুলি তিনি কার কাছে রেখে যাবেন? তাই তিনি সদা শিবের মতো উত্তরসাধক মায়ের কাছ থেকে চেয়েছেন, যিনি জগতের সমস্ত ভার বহন করবেন।

দিব্যদৃষ্টি

রামকৃষ্ণদেব মায়ের গান শুনতে চাইলে সুরেন্দ্রনাথ নরেন্দ্র বলে এক যুবকে তাঁর কাছে নিয়ে আসার কথা বলেন। নাম শুনেই দিব্যশক্তির অধিকারী রামকৃষ্ণদেবের মন নরেন্দ্রকে সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ বলে ইঙ্গিত দেয়। এই নরেন্দ্রই তাঁর শ্রেষ্ঠ উত্তরসাধক হোক -এই বলে তিনি মায়ের কাছে প্রার্থনা করেন। তারপর যখন নরেন্দ্রকে চোখের দেখা দেখলেন তখন তার রূপে মুগ্ধ হয়ে গেলেন। তাঁর দীর্ঘদিনের পিপাসা মিটল। আর কোনো সন্দেহ রইল না যে, এই নরেন্দ্রই বিশ্বের কল্যাণকর সদাশিব। মায়ের কাছে প্রার্থনা করলেন, এই নরেন্দ্র যেন দেশের সমস্ত কালিমা দূর করতে সক্ষম হয়।

উপসংহার:- সর্বোপরি, রামকৃষ্ণদেবের উপস্থিতি অলৌকিক পরিবেশ সৃষ্টি করত, শরীর থেকে অনবরত জ্যোতির্ধারা নির্গত হত- “শরীরাদস্য নিরন্তরং প্রসরতি জ্যোতির্ধারা”, তাঁর কণ্ঠ থেকে সর্বদা প্রবাহিত হয় সুরধনির ধারার মতো অমৃতধারা এবং তাঁর অম্লান শিশুসুলভ হাসিতে সূর্যের দ্যুতি জগৎকে মহোময় করে রেখেছে। তাঁর এই সূর্যকিরণের মতো হাসি মানুষের মনের কালিমা ও দুঃখরূপ অন্ধকার দূর করে আনন্দ জ্যোতি প্রকাশ করে।

Leave a Comment