সংস্কৃত পদ প্রকরণ

সংস্কৃত ব্যাকরণে পদ -এর সংজ্ঞা, শ্রেণীবিভাগ – বিশেষ্য, সর্বনাম, বিশেষণ, অব্যয়, ক্রিয়া পদের সংজ্ঞা এবং তাদের শ্রেণীবিভাগ ।

Table of Contents

পদ প্রকরণ

সকল সংস্কৃত শিক্ষার্থীদের কাছেই পদ প্রকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় । সংস্কৃত ভাষা ভালোভাবে বুঝতে এই অধ্যায়ের গুরুত্ব অপরিসীম । নিম্নে পদ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল ।

পদের সংজ্ঞাঃ-

আমরা মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য বাক্য ব্যবহার করে থাকি । এই বাক্যগুলি পদের সমষ্টি । শব্দের বা ধাতুর সাথে বিভক্তি যুক্ত হলে তাকে পদ বলে ।

শব্দের সঙ্গে যে বিভক্তিগুলি যুক্ত হয় সেগুলির নাম সুপ্ বিভক্তি (সু, ও, জস্ ইত্ । আর ধাতুর সঙ্গে যে বিভক্তিগুলি যুক্ত হয় সেগুলির নাম তিঙ্ বিভক্তি (তি, তস্, অন্তি ইত্যাদি)।

সুবন্ত পদের সংজ্ঞাঃ-

সুপ্ বিভক্তি যুক্ত পদকে বলা হয় সুবন্ত পদ ।

তিঙন্ত পদের সংজ্ঞাঃ-

তিঙ্ বিভক্তি যুক্ত পদকে বলা হয় তিঙন্ত পদ ।

পদের শ্রেণীবিভাগঃ-

পদ পাঁচ প্রকার যথা –

  • ১. বিশেষ্য পদ,
  • ২. সর্বনাম পদ,
  • ৩. বিশেষণ পদ,
  • ৪. অব্যয় পদ,
  • ৫. ক্রিয়া পদ ।

১. বিশেষ্য পদের সংজ্ঞাঃ-

যে পদ দিয়ে কোনও ব্যক্তি, বস্তু, জাতি, গুণ, ক্রিয়া ইত্যাদির নাম বোঝায় তাকে বিশেষ্য পদ বলে । যেমন – রামঃ, জলম্, লতা ইত্যাদি ।

বিশেষ্য পদের শ্রেণীবিভাগঃ-

প্রকৃতি বিচারে বিশেষ্য পদ কয়েক রকমের হতে পারে যেমন –

(ক) সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য পদঃ-

কোনোও ব্যক্তি, বস্তু, স্থান, নদী ইত্যাদির বিশেষ নামকে সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য পদ বলে যেমন – দশরথঃ, পনসম্, অযোধ্যা ইত্যাদি

(খ) বস্তুবাচক বিশেষ্য পদঃ-

কোনও বস্তুকে বোঝাতে সাধারণভাবে যে বিশেষ্য পদ ব্যবহার করা হয়, তাকে বস্তুবাচক বিশেষ্য পদ বলে যেমন – ফলম্, পুষ্পম্, পুস্তকম্ ইত্যাদি

(গ) জাতিবাচক বিশেষ্য পদঃ-

কোনও সমজাতীয় প্রাণী, মানুষ প্রভৃতির শ্রেণী যে বিশেষ্য পদের দ্বারা বোঝানো হয়, তাকে জাতিবাচক বিশেষ্য পদ বলে যেমন – ব্রাহ্মণঃ, বৌদ্ধঃ, মনুষ্যঃ ইত্যাদি

(ঘ) সমষ্টিবাচক বিশেষ্য পদঃ-

এক জাতীয় মানুষ, প্রাণী বা বস্তুর সমাহার বা সমষ্টিবোধক পদকে সমষ্টিবাচক বিশেষ্য বলে । যেমন – সভা, সমূহঃ, শ্রেণি প্রভৃতি।

(ঙ) গুণবাচক বা ভাববাচক বিশেষ্য পদঃ-

এমন কিছু বিশেষ্য পদ আছে যেগুলি ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নয়, কিন্তু বোধ দ্বারা ধারণা করা যায়। এগুলিকে বলে ভাববাচক বা গুণবাচক বিশেষ্য পদ । যেমন – দয়া, ক্ষমা, বিদ্যা, ধর্মঃ, প্রীতিঃ, ধৈর্যম্, গৌরবম্, স্বাস্থ্যম্, মমত্বম্, দৈন্যম্ প্রভৃতি।

(চ) ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য পদঃ-

যে বিশেষ্য দ্বারা কোনও ক্রিয়া বা কাজের নাম বোঝায় তাকে ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন – ভ্রমণম্, শয়নম্, ভোজনম্, গমনম্, আহারঃ, শ্রবণম্, প্রভৃতি।

২. সর্বনাম পদঃ-

বাক্যে বিশেষ্য পদের পরিবর্তে যে পদ ব্যবহৃত হয়, তাকে বলে সর্বনাম পদ। যেমন – সঃ, অহম্, তম্, যঃ ইত্যাদি।

সর্বনাম পদের শ্রেণীবিভাগঃ-

সর্বনাম পদ কয়েক রকমের হতে পারে । যেমন –

(ক) ব্যক্তিবাচক সর্বনামঃ-

অম্মদ, যুগ্মদ, তদ্‌ ।

(খ) নির্দেশক সর্বনামঃ-

অদস্, ইদম্, এতদ্ ।

(গ) সাকল্যবাচক সর্বনামঃ-

সর্ব, উভ, বিশ্ব, উভয় ।

(ঘ) প্রশ্নবাচক সর্বনামঃ-

কিম্‌ ।

(ঙ) দিক বাচক সর্বনামঃ-

পূর্ব, উত্তর, দক্ষিণ ।

মনে রাখবেঃ-

এ ছাড়াও আত্মবাচক, সম্বন্ধবাচক প্রভৃতি অন্যান্য ধরণের সর্বনাম হতে পারে। শব্দরূপের ভেদ অনুসারে সর্বনাম শব্দকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন—

  • (ক) সর্বাদি – সর্ব, বিশ্ব, উভয়, নেম, সম, সিম, একতর, উভ, এক, দ্বি প্রভৃতি।
  • (খ) অন্যাদি – অন্য, অন্যতর, ইতর, কতর, কতম, যতম, ততর, ততম, একতম প্রভৃতি।
  • (গ) পূর্বাদি – পূর্ব, পর, অপর, অবর, দক্ষিণ, উত্তর, অন্তর, স্ব প্রভৃতি।
  • (ঘ) যদাদি – যদ্, তদ্, এতদ্, কিম্ প্রভৃতি।
  • (ঙ) ইদমাদি – ইদম্, অদস্, যুগ্মদ, অম্মদ, ভবৎ প্রভৃতি।

৩. বিশেষণ পদের সংজ্ঞাঃ-

যেসব পদ বিশেষ্য, সর্বনাম, বিশেষণ, অব্যয় ও ক্রিয়া পদের (অর্থাৎ অন্য যে-কোনও পদের) দোষ, গুণ, সংখ্যা, পরিমাণ, অবস্থা, প্রকৃতি ইত্যাদি বুঝিয়ে সেই অন্য পদটির বিশেষত্ব প্রকাশ করে, তাদের বলে বিশেষণ পদ। যেমন – সুন্দরঃ নরঃ, শীতলঃ পবনঃ প্রভৃতি।

বিশেষণ পদের শ্রেণীবিভাগঃ-

বিশেষণ পদকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন –

(ক) বিশেষ্যের বিশেষণঃ-

দুষ্টঃ বালকঃ; মধুরম্ ফলম্; বুদ্ধিমতী বালিকা প্রভৃতি।

(খ) সর্বনামের বিশেষণঃ-

ভবান্ শ্রমশীলঃ; বুদ্ধিমতা ভবতা; গমনরতস্য তস্য প্রভৃতি। [ সর্বনামের বিশেষণ প্রকৃতপক্ষে যে বিশেষ্য পদের বদলে সর্বনামটি ব্যবহৃত সেই বিশেষ্য পদেরই বিশেষণ।]

(গ) বিশেষণের বিশেষণঃ-

অত্যস্তম্ মিষ্টম্ ফলম্; পূর্ণম্ প্রস্ফুটিতম্ কমলম্; অতীব বুদ্ধিমতী বালিকা প্রভৃতি।

(ঘ) অব্যয়ের বিশেষণঃ-

মনোহরম্ প্রাতঃ; ভীষণম্ নক্তম্ ইত্যাদি। [ অব্যয়ের বিশেষণ সর্বদাই ক্লীবলিঙ্গ ১ বচন হয়।]

(ঙ) ক্রিয়ার বিশেষণঃ-

ঊষা দ্রুতম্ ধাবতি; বালা মৃদু হসতি; নার্যঃ করুণম্ প্রভৃতি। [ ক্রিয়া-বিশেষণে সর্বদাই ক্লীবলিঙ্গে ২য়া বিভক্তির ১বচন হয়। ]

মনে রাখবেঃ-

অন্যভাবে বিশেষণ পদকে গুণবাচক, দোষবাচক, তুলনাবাচক, অপকর্ষবাচক, সংখ্যাবাচক, পূরণবাচক, সর্বনামীয় প্রভৃতি অনেক ভাগে ভাগ করা যায়।

৪. অব্যয় পদের সংজ্ঞাঃ-

তিনটি লিঙ্গে, সাতটি বিভক্তিতে এবং সব বচনে (৭ বিভক্তি x ৩বচন = ২১টি রূপ) যেসব শব্দের কোনও পরিবর্তন হয় না, সেগুলিকে বলে অব্যয় পদ । ‘পরিবর্তন হয় না’ কথাটির অর্থ হল – বিভক্তি বচনাদি যুক্ত হলেও তা অব্যয়ের পর লোপ পায়। এজন্যই অব্যয়ের রূপের কোনও পরিবর্তন হয় না। অব্যয় পদ অনেক। যেমন –

অব্যয় পদবাংলা অর্থ
অকস্মাৎহঠাৎ
অচিরেণশীঘ্র, অবিলম্বে
অতঃএজন্য
উভয়তঃউভয় দিকে
ঋতেবিনা
একত্রএকসঙ্গে, এক জায়গায়
একদাএকবার, একদিন
অত্রএখানে
এব
অথতারপর
এবম্এভাবে
অথ কিম্হ্যাঁ
কথম্কী ভাবে, কেন
কথমপিকষ্টে, অতি চেষ্টায়
অদ্যআজ
কদাকখন
অব্যয় পদ ও তার বাংলা অর্থ

অব্যয় পদের শ্রেণীবিভাগঃ-

অব্যয় পদগুলিকে নানা শ্রেণিতে ভাগ করা যেতে পারে। যেমন –

(ক) সংযোজক অব্যয়ঃ-

চ প্রভৃতি ।

(খ) বিয়োজক অব্যয়ঃ-

অথবা, বা, কিংবা প্রভৃতি

(গ) সঙ্কোচক অব্যয়ঃ-

কিন্তু, তু প্রভৃতি ।

(ঘ) হেতুবোধক অব্যয়ঃ-

অতঃ, যতঃ প্রভৃতিঃ-

(ঙ) নিত্যসম্বন্ধী অব্যয়ঃ-

যদা-তদা, যতঃ-ততঃ প্রভৃতি ।

(চ) পদাম্বয়ী অব্যয়ঃ-

বিনা, ঋতে, অভিতঃ প্রভৃতি ।

(ছ) প্রশ্নসূচক অব্যয়ঃ-

অপি, কিম, কথম্ প্রভৃতি ।

(জ) সম্বোধনসূচক অব্যয়ঃ-

হে, ভোঃ প্রভৃতি ।

(ঝ) ভাবসূচক অবায়ঃ-

অহো। আঃ। প্রভৃতি ।

(ঞ) বাক্যালংকার অব্যয়ঃ-

বা, হি প্রভৃতি ।

(ট) কালবাচক অব্যয়ঃ-

অদ্য, শ্বঃ, কদা, যদা প্রভৃতি ।

(ঠ) স্থানবাচক অবায়ঃ-

কুত্র, যত্র, তত্র প্রভৃতি ।

(ড) নিশ্চয়তাসূচক অব্যয়ঃ-

এব, হি, অপি প্রভৃতি ।

(ঢ) উপসর্গ সূচক অব্যয়ঃ-

এ, পরা, অপ, বি প্রভৃতি ।

(ণ) ক্রিয়াবাচক অব্যয়ঃ-

করা, গহ্বা, আগম্য প্রভৃতি

মনে রাখবেঃ-

ক্ত্বাচ্, ল্যপ্, তুমুন্ প্রত্যয়ান্ত পদ ও আরও কিছু অন্যান্য প্রত্যয়ান্ত পদও আছে।

৫. ক্রিয়া পদের সংজ্ঞাঃ-

যে পদ দ্বারা হওয়া, থাকা প্রভৃতি ভাব এবং যাওয়া, দেখা, হাসা প্রভৃতি কাজ করা বোঝায় তাকে ক্রিয়াপদ বলে। যেমন –

  • বৃষ্টিঃ ভবতি ।
  • ছাত্রঃ পঠতি ।
  • বালিকে নৃত্যতঃ ।

ধাতুর উত্তর (পরে) কালবাচক প্রত্যয় ও ‘তি’, ‘তে’ প্রভৃতি পুরুষবাচক বিভক্তি যোগ করে ক্রিয়াপদ গঠন করা হয়।

ক্রিয়াপদের শ্রেণীবিভাগঃ-

বিভিন্ন দিক থেকে ক্রিয়াপদের নানারকম বিভাজন হতে পারে ।

বাক্যের সমাপ্তির দিক থেকে ক্রিয়াপদ দু’রকম

(ক) সমাপিকা ক্রিয়াঃ-

যে ক্রিয়াপদ দ্বারা বাক্যের সমাপ্তি বোঝায়, তার নাম সমাপিকা ক্রিয়া । তিঙ্ বিভক্তিযুক্ত ক্রিয়াপদগুলি এবং ক্ত, ক্তবতু প্রভৃতি প্রত্যয়ান্ত ক্রিয়াপদগুলি সমাপিকা ক্রিয়া । যেমন – সঃ গচ্ছতি। সা গীতাম্ অপঠৎ। অহম্ গতবান্।

(খ) অসমাপিকা ক্রিয়াঃ-

বাক্যের সমাপ্তি না বুঝিয়ে যে ক্রিয়াপদ অন্য কোনো সমাপিকা ক্রিয়ার অপেক্ষা রাখে, তার নাম অসমাপিকা ক্রিয়া । ক্ত্বাচ্, ল্যপ্, তুমুন্ প্রভৃতি প্রত্যয়ান্ত পদগুলি অসমাপিকা ক্রিয়া । যেমন – সা গৃহৎ গত্বা অখাদৎ। মাতরম্ প্রণত্য গৃহাৎ গচ্ছ। বিশ্বজিৎ পঠিতুং গচ্ছতি।

কর্মের দিক থেকে ক্রিয়াপদকে দু’ভগে ভাগ করা হয় ।

(ক) সকর্মক ক্রিয়াঃ-

যে ক্রিয়ার কর্ম থাকে তার নাম সকর্মক ক্রিয়া। যেমন, সা গৃহং গচ্ছতি। ছাত্ৰঃ পুস্তকং পঠতি প্রভৃতি।

সকর্মক ক্রিয়ার একটি রূপভেদ হল দ্বিকর্মক ক্রিয়া। কোনও ক্রিয়ার দু’টি কর্ম থাকলে তাকে দ্বিকর্মক ক্রিয়া বলে। √দুহ, √যাচ্, পিচ্, √নী, √হৃ, √বহ্ প্রভৃতি কয়েকটি মাত্র দ্বিকর্মক ধাতু আছে। এইসব ক্রিয়াপদের যে দু’টি করে কর্ম হয় তাদের একটির নাম মুখ্য কর্ম বা প্রধান কর্ম বা বিবক্ষিত কর্ম বা কথিত কর্ম। অন্য কর্মটিকে বলা হয় গৌণ কর্ম বা অপ্রধান কর্ম বা অবিবক্ষিত কর্ম বা অকথিত কর্ম। দু’টি কর্মের মধ্যে যেটিতে কর্মকারক হবেই তাকে বলে মুখ্য কর্ম এবং যেটিতে অন্য কারক হবার সম্ভাবনা আছে, অথচ বক্তার ইচ্ছাবশত অন্য কারক না হয়ে কর্মকারকই হয়েছে তাকে বলে গৌণ কর্ম। যেমন, পিতা পুত্রম্ গৃহম্ (গৃহে) নয়তি। এখানে ‘পুত্রম্’ মুখ্য কর্ম এবং ‘গৃহম্‌’ গৌণ কর্ম।

(খ) অকর্মক ক্রিয়াঃ-

যে ক্রিয়ার কোনও কর্ম থাকে না তাকে অকর্মক ক্রিয়া বলে । √ইস্, √শী, √ক্রন্দ প্রভৃতি অকর্মক ধাতু (ক্রিয়া)। যেমন – সা হসতি ।

এ ছাড়াও ত্রিয়াপদকে নিম্নলিখিত ভাবেও ভাগ করা যায়।

  • (ক) মৌলিক ক্রিয়া – (√গম্ = গচ্ছতি);
  • (খ) প্রযোজক বা ণিজন্ত ক্রিয়া – (√পঠ + ণিচ্ = পাঠয়তি);
  • (গ) সনত্ত ক্রিয়া – (√পা + সন্ + লট্ তি = পিপাসতি);
  • (ঘ) যস্ত ক্রিয়া – (√দৃশ্ + যক্ষ্ + লট্‌তে = দরীদৃশ্যতে);
  • (ঙ) নামধাতুজ ক্রিয়া – (পুত্র + কাম্যচ্> পুত্রকাম্য + ল তি= পুত্রকাম্যতি। পুত্ৰীয়তি)

1 thought on “সংস্কৃত পদ প্রকরণ”

Leave a Comment