দ্বাদশ শ্রেণীর সংস্কৃত পদ্যাংশ শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা-( শব্দার্থ ও বঙ্গানুবাদ )

দ্বাদশ শ্রেণীর সংস্কৃত পদ্যাংশ শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (higher Secondry Class – xii) হতে পাঠ্য শ্লোকগুলির মূলপাঠ, শব্দার্থ ও বঙ্গানুবাদ নিচে দেওয়া হল।

Table of Contents

উচ্চমাধ্যমিক দ্বাদশ শ্রেণীর সংস্কৃত পদ্যাংশ শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা

ব্যাসদেব রচিত “মহাভারত”-এর ভীষ্মপর্বের 25 থেকে 42 তম অধ্যায় “শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা” নামে পরিচিত। 18 টি অধ্যায়ে বিভক্ত “শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা”-র তৃতীয় অধ্যায়ের নির্বাচিত 11 টি শ্লোক আমাদের পাঠ্য।

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (শ্লোক – 1)

মূলপাঠ

ন কর্মণামনারম্ভান্নৈষ্কর্ম্যং পুরুষোশ্নুতে।

ন চ সন্ন্যসনাৎ এব সিদ্ধিং সমধিগচ্ছতি।

সন্ধিবিহীন পাঠ

ন কর্মণাম্ অনারম্ভাৎ নৈষ্কর্ম্যং পুরুষ: অশ্নুতে।

ন চ সন্ন্যসনাৎ এব সিদ্ধিং সমধিগচ্ছতি।

শব্দার্থ

ন (না) কর্মণাম্ (কর্মগুলির) অনারম্ভাৎ (অনুষ্ঠান ছাড়া) নৈষ্কর্ম্যং (নিষ্কর্মভাব/মোক্ষ) পুরুষ: (মানুষ) অশ্নুতে (লাভ করে) ন (না) চ (এবং) সন্ন্যসনাৎ (কর্মত্যাগ থেকে) এব (ই) সিদ্ধিং (সিদ্ধি) সমধিগচ্ছতি (লাভ করতে পারে)।

বঙ্গানুবাদ

কর্মগুলির অনুষ্ঠান ছাড়া মানুষ নিষ্কর্মভাব বা মোক্ষ লাভ করে না এবং কর্মত্যাগ থেকেই সিদ্ধি লাভ করতে পারে না।

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (শ্লোক – 2)

মূলপাঠ

ন হি ক: চিৎ ক্ষণম্ অপি জাতু তিষ্ঠতি অকর্মকৃৎ।

কার্যতে হি অবশ: কর্ম সর্ব: প্রকৃতিজৈ: গুণৈ:।

সন্ধিবিহীন পাঠ

ন হি ক: চিৎ ক্ষণম্ অপি জাতু তিষ্ঠতি অকর্মকৃৎ।

কার্যতে হি অবশ: কর্ম সর্ব: প্রকৃতিজৈ: গুণৈ:।

শব্দার্থ

ন (না) হি (অবশ্যই) ক: (কেউ) চিৎ (ই) ক্ষণম্ (ক্ষণকাল) অপি (ও) জাতু (কখনো) তিষ্ঠতি (থাকে) অকর্মকৃৎ (কর্ম না করে)। কার্যতে (করে) হি (কারণ) অবশ: (বশবর্তী হয়ে) কর্ম (কর্ম) সর্ব: (সকলে) প্রকৃতিজৈ: (প্রকৃতিজাত) গুণৈ: (গুণের দ্বারা)।

বঙ্গানুবাদ

কর্ম না করে কেউ কখনো ক্ষণকালও থাকে না। কারণ সকলেই প্রকৃতিজাত গুণের দ্বারা বশবর্তী হয়ে কর্ম করে।

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (শ্লোক – 3)

মূলপাঠ

কর্ম ইন্দ্রিয়াণি সংযম্য য: আস্তে মনসা স্মরন্।

ইন্দ্রিয়-অর্থান্ বিমূঢ়-আত্মা মিথ্যাচার: স: উচ্যতে।

সন্ধিবিহীন পাঠ

কর্ম ইন্দ্রিয়াণি সংযম্য য: আস্তে মনসা স্মরন্।

ইন্দ্রিয়-অর্থান্ বিমূঢ়-আত্মা মিথ্যাচার: স: উচ্যতে।

শব্দার্থ

কর্ম (কর্ম) ইন্দ্রিয়াণি (ইন্দ্রিয়গুলিকে) সংযম্য (সংযত করে) য: (যে) আস্তে (থাকে) মনসা (মনের দ্বারা) স্মরন্ (স্মরণ করে/ভাবে)। ইন্দ্রিয় (ইন্দ্রিয়াদি) অর্থান্ (বিষয়সমূহ) বিমূঢ় (মূর্খ) আত্মা (ব্যক্তি) মিথ্যাচার: (মিথ্যাচারী) স: (সে) উচ্যতে (বলা হয়)।

বঙ্গানুবাদ

কর্মেন্দ্রিয়গুলিকে সংযত করে যে ব্যক্তি মনের দ্বারা ইন্দ্রিয়াদি বিষয়সমূহ ভাবতে থাকে, সেই মূর্খ ব্যক্তিকে মিথ্যাচারী বলা হয়।

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (শ্লোক – 4)

মূলপাঠ

য: তু ইন্দ্রিয়াণি মনসা নিয়ম্য আরভতে অর্জুন !।

কর্ম-ইন্দ্রিয়ৈ: কর্মযোগম্ অসক্ত: স: বিশিষ্যতে।

সন্ধিবিহীন পাঠ

য: তু ইন্দ্রিয়াণি মনসা নিয়ম্য আরভতে অর্জুন !।

কর্ম-ইন্দ্রিয়ৈ: কর্মযোগম্ অসক্ত: স: বিশিষ্যতে।

শব্দার্থ

য: (যে) তু (কিন্তু) ইন্দ্রিয়াণি (ইন্দ্রিয়গুলিকে) মনসা (মনের দ্বারা) নিয়ম্য (সংযত করে) আরভতে (আরম্ভ করে) অর্জুন ! (হে অর্জুন)। কর্ম (কর্ম) ইন্দ্রিয়ৈ: (ইন্দ্রিয়ের দ্বারা) কর্মযোগম্ (কর্মযোগ) অসক্ত: (অনাসক্ত ভাবে) স: (সে) বিশিষ্যতে (শ্রেষ্ঠ হন)।

বঙ্গানুবাদ

হে অর্জুন ! কিন্তু যে ব্যক্তি ইন্দ্রিয়গুলিকে (জ্ঞানেন্দ্রিয়) মনের দ্বারা সংযত করে কর্মেন্দ্রিয়গুলির দ্বারা অনাসক্তভাবে কর্মযোগ আরম্ভ করেন, তিনিই শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি।

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (শ্লোক – 5)

মূলপাঠ

নিয়তং কুরু কর্ম ত্বং কর্ম জ্যায়: হি অকর্মণ:।

শরীরযাত্রা অপি চ তে ন প্রসিধ্যেৎ অকর্মণ:।

সন্ধিবিহীন পাঠ

নিয়তং কুরু কর্ম ত্বং কর্ম জ্যায়: হি অকর্মণ:।

শরীরযাত্রা অপি চ তে ন প্রসিধ্যেৎ অকর্মণ:।

শব্দার্থ

নিয়তং (নিয়ত) কুরু (করো) কর্ম (কর্ম) ত্বং (তুমি) কর্ম (কর্ম) জ্যায়: (ভালো) হি (যেহেতু) অকর্মণ: (কর্ম না করার চেয়ে)| শরীরযাত্রা (জীবনযাত্রা) অপি (ও) চ (এবং) তে (তোমার) ন (না) প্রসিধ্যেৎ (চলবে) অকর্মণ: (কর্ম না করলে)।

বঙ্গানুবাদ

তুমি (অর্জুন) নিয়ত কর্ম করো। কারণ কর্ম না করার চেয়ে কর্ম করা ভালো। কর্ম না করলে তোমার (অর্জুন) জীবনযাত্রাও চলবে না।

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (শ্লোক – 6)

মূলপাঠ

তস্মাৎ অসক্ত: সততং কার্যং কর্ম সমাচার।

অসক্ত: হি আচরন্ কর্ম পরম্ আপ্নোতি পুরুষ:।

সন্ধিবিহীন পাঠ

তস্মাৎ অসক্ত: সততং কার্যং কর্ম সমাচার।

অসক্ত: হি আচরন্ কর্ম পরম্ আপ্নোতি পুরুষ:।

শব্দার্থ

তস্মাৎ (অতএব) অসক্ত: (অনাসক্ত হয়ে) সততং (সব সময়) কার্যং (কর্তব্য) কর্ম (কর্ম) সমাচার (সম্পাদন করো)। অসক্ত: (অনাসক্ত হয়ে) হি (কারণ) আচরন্ (করলে) কর্ম (কর্ম) পরম্ (শ্রেষ্ঠ স্থান) আপ্নোতি (লাভ করে) পুরুষ: (মানুষ)।

বঙ্গানুবাদ

অতএব অনাসক্ত হয়ে সব সময় কর্তব্য কর্ম সম্পাদন করো। কারণ অনাসক্ত হয়ে কর্ম করলে মানুষ শ্রেষ্ঠ স্থান লাভ করে।

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (শ্লোক – 7)

মূলপাঠ

কর্মণা এব হি সংসিদ্ধিম্ আস্থিতা: জনক: আদয়:।

লোকসংগ্রহম্ এব অপি সংপশ্যন্ কর্তুম্ অর্হসি।

সন্ধিবিহীন পাঠ

কর্মণা এব হি সংসিদ্ধিম্ আস্থিতা: জনক: আদয়:।

লোকসংগ্রহম্ এব অপি সংপশ্যন্ কর্তুম্ অর্হসি।

শব্দার্থ

কর্মণা (কর্মের দ্বারা) এব (ই) হি (অবশ্যৃই) সংসিদ্ধিম্ (সিদ্ধি) আস্থিতা: (লাভ করেছিলেন) জনক: (জনক) আদয়: (প্রভৃতি রাজাগণ)। লোকসংগ্রহম্ (জনকল্যাণের দিকে) এব (ই) অপি (ও) সংপশ্যন্ (লক্ষ্য রেখে) কর্তুম্ অর্হসি (কর্ম করা উচিত)।

বঙ্গানুবাদ

জনক প্রভৃতি রাজাগণ কর্মের দ্বারাই সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। তাই জনকল্যাণের দিকে লক্ষ্য রেখেই কর্ম করা উচিত।

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (শ্লোক – 8)

মূলপাঠ

যৎ যৎ আচরতি শ্রেষ্ঠ: তৎ তৎ এব ইতর: জন:।

স যৎ প্রমাণং কুরুতে লোক: তৎ অনুবর্ততে।

সন্ধিবিহীন পাঠ

যৎ যৎ আচরতি শ্রেষ্ঠ: তৎ তৎ এব ইতর: জন:।

স যৎ প্রমাণং কুরুতে লোক: তৎ অনুবর্ততে।

শব্দার্থ 

যৎ (যা) যৎ (যা) আচরতি (আচরণ করেন) শ্রেষ্ঠ: (শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি) তৎ (তা) তৎ (তা) এব (ই) ইতর: (সাধারণ) জন: (মানুষ)| স (তিনি) যৎ (যা) প্রমাণং (প্রমাণ) কুরুতে (করেন) লোক: (সকলে) তৎ (তা) অনুবর্ততে (অনুসরণ করে)।

বঙ্গানুবাদ

শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি যা যা আচরণ করেন সাধারণ ব্যক্তিও তাই তাই আচরণ করেন। তিনি যা প্রমাণ করেন সকলে তা অনুসরণ করে।

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (শ্লোক – 9)

মূলপাঠ

ন মে পার্থাস্তি কর্তব্যং ত্রিষু লোকেষু কিঞ্চন ।

ন মে অনবাপ্তম্ অবাপ্তব্যং বর্তে এব চ কর্মণি ।

সন্ধিবিহীন পাঠ

ন মে পার্থ অস্তি কর্তব্যং ত্রিষু লোকেষু কিঞ্চন।

ন মে অনবাপ্তম্ অবাপ্তব্যং বর্তে এব চ কর্মণি।

শব্দার্থ

ন (না) মে (আমার) পার্থ (হে পার্থ) অস্তি (আছে) কর্তব্যং (কর্তব্য) ত্রিষু (তিন) লোকেষু (লোকে) কিঞ্চন (কোনও)| ন (না) মে (আমার) অনবাপ্তম্ (অপ্রাপ্ত) অবাপ্তব্যং (পাওয়ার মতো) বর্তে (ব্যাপৃত আছি) এব (ই) চ (এবং) কর্মণি (কর্মে)।

বঙ্গানুবাদ

হে পার্থ ! এই তিন লোকে আমার (শ্রীকৃষ্ণ) কোনও কর্তব্য কর্ম নেই, আমার (শ্রীকৃষ্ণ) অপ্রাপ্ত বা পাওয়ার মতো কিছুই নেই। তবুও আমি (শ্রীকৃষ্ণ) কর্মেই ব্যাপৃত আছি।

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (শ্লোক – 10)

মূলপাঠ

যে মে মতমিদং নিত্যমনুতিষ্ঠন্তি মানবা: ।

শ্রদ্ধাবন্তোহনসূয়ন্তো মুচ্যন্তে তেহপি কর্মভি: ।

সন্ধিবিহীন পাঠ

যে মে মতম্ ইদং নিত্যং অনুতিষ্ঠন্তি মানবা: ।

শ্রদ্ধাবন্ত: অনসূয়ন্ত: মুচ্যন্তে তে অপি কর্মভি: ।

শব্দার্থ  

যে (যে সকল) মে (আমার) মতম্ (মত) ইদং (এই) নিত্যং (সর্বদা) অনুতিষ্ঠন্তি (পালন করে) মানবা: (মানুষেরা)| শ্রদ্ধাবন্ত: (শ্রদ্ধাবান) অনসূয়ন্ত: (অসূয়াশূন্য) মুচ্যন্তে (মুক্ত হয়) তে (তারা) অপি (ও) কর্মভি: (কর্মবন্ধন থেকে)।

বঙ্গানুবাদ

যে সকল শ্রদ্ধাবান ও অসূয়াশূন্য মানুষ আমার (শ্রীকৃষ্ণ) এই মত সর্বদা পালন করেন তারাও কর্মবন্ধন থেকে মুক্তি পান।

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (শ্লোক – 11)

মূলপাঠ

শ্রেয়ান্ স্বধর্মো বিগুণঃ পরধর্মাৎ স্বনুষ্ঠিতাৎ ।

স্বধর্মে নিধনং শ্রেয়: পরধর্মো ভয়াবহ: ।

সন্ধিবিহীন পাঠ 

শ্রেয়ান্ স্বধর্ম: বিগুণ: পরধর্মাৎ সু অনুষ্ঠিতাৎ ।

স্বধর্মে নিধনং শ্রেয়: পরধর্ম: ভয়াবহ: ।

শব্দার্থ

শ্রেয়ান্ (অপেক্ষাকৃত ভালো) স্বধর্ম: (নিজের ধর্ম) বিগুণ: (গুণহীন) পরধর্মাৎ (পরের ধর্ম থেকে) সু (ভালো) অনুষ্ঠিতাৎ (অনুষ্ঠিত)। স্বধর্মে (নিজের ধর্মে) নিধনং (মৃত্যু) শ্রেয়: (ভালো) পরধর্ম: (পরের ধর্ম) ভয়াবহ: (ভয়ঙ্কর)।

বঙ্গানুবাদ

ভালোভাবে অনুষ্ঠিত পরের ধর্ম থেকে গুণহীন নিজের ধর্ম অপেক্ষাকৃত ভালো। নিজের ধর্মে মৃত্যুও ভালো, পরের ধর্ম ভয়ঙ্কর।

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার তৃতীয় অধ্যায় কর্মযোগ থেকে ছোটো প্রশ্ন ও উত্তর দেখতে নিচের link এ click করুণ

কর্মযোগ থেকে ছোটো প্রশ্ন ও উত্তর

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা হতে জিজ্ঞাস্য (FAQ)

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার অর্থ কী ?

উত্তরঃ- ‘শ্রীমদ্’ শব্দের অর্থ – সুন্দর, ‘ভগবদ্’ শব্দের অর্থ – ঈশ্বর বা ভগবান, গীতা অর্থাৎ গান | তাই ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মুখনিঃসৃত বাণীই হল শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা |

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার রচয়িতা কে ?

উত্তরঃ- মহর্ষি কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন বেদব্যাস (সংক্ষেপে ব্যাসদেব) |

গীতার আঠারোটি অধ্যায়ের নাম কী ?

উত্তরঃ- অর্জুনবিষাদযোগ, সাংখ্যযোগ, কর্মযোগ, জ্ঞানযোগ, কর্মসন্ন্যাসযোগ, ধ্যানযোগ, বিজ্ঞানযোগ, অক্ষরব্রহ্মযোগ, রাজগুহ্যযোগ,বিভূতিযোগ, বিশ্বরূপদর্শনযোগ, ভক্তিযোগ, প্রকৃতিপুরুষবিবেকযোগ, গুণত্রয়বিভাগযোগ, পুরুষোত্তমযোগ, দৈবাসুরসম্পদবিভাগযোগ, শ্রদ্ধাত্রয়বিভাগযোগ, মোক্ষযোগ |

Leave a Comment