সংস্কৃত লিঙ্গ প্রকরণ

লিঙ্গের সংঙ্গা, লিঙ্গের প্রকারভেদ, পুং- লিঙ্গ শব্দ চেনার উপায়, স্ত্রী- লিঙ্গ শব্দ চেনার উপায়, ক্লীবলিঙ্গ শব্দ চেনার উপায় ।

Table of Contents

সংস্কৃত লিঙ্গ প্রকরণ

লিঙ্গের সংঙ্গাঃ-

যে চিহ্নের সাহায্যে কোন শব্দ পুরুষবাচক, স্ত্রীবাচক, না ক্লীববাচক তা বোঝা যায় তাকে বলে লিঙ্গ।

লিঙ্গের প্রকারভেদঃ-

সংস্কৃত ভাষায় লিঙ্গ তিনটি । যথা –

  • (১)পুংলিঙ্গ
  • (২)স্ত্রীলিঙ্গ
  • (৩)ক্লীবলিঙ্গ

মনে রাখবেঃ-

সংস্কৃতে শুধু অর্থ দেখে লিঙ্গ নির্ণয় করা যায় না। দার, ভার্যা, কলত্র, পত্নী প্রভৃতি শব্দগুলির অর্থ স্ত্রী । কিন্তু ‘দার’ শব্দটি পুংলিঙ্গ, ‘ভার্যা’ ও ‘পত্নী’ শব্দ স্ত্রীলিঙ্গ এবং ‘কলত্র’ শব্দ ক্লীবলিঙ্গ। কাজেই বিশেষ অনুশীলন দ্বারাই সংস্কৃত শব্দের লিঙ্গ নির্ণয় করা সম্ভব।

পুং লিঙ্গ শব্দ চেনার উপায়ঃ-

(১) যেসব শব্দে পুরুষ জাতিকে বোঝায়, সেই শব্দগুলি পুংলিঙ্গ ।

(২) দেব, নর, অসুর, স্বর্গ, যজ্ঞ, পর্বত, বৃক্ষ, সময়, অসি, শর, শত্রু, কণ্ঠ, কেশ, মাস, ঋতু, অগ্নি, সর্প, কর ও বায়ুবাচক শব্দগুলি পুংলিঙ্গ হয়। যেমন—

দেববাচক শব্দ পুংলিঙ্গঃ-

দেবঃ, সুরঃ, অমরঃ, আদিত্যঃ, নির্জরঃ, অসুরারিঃ, দৈত্যারিঃ প্রভৃতি।কিন্তু ‘দেবতা’ শব্দ স্ত্রীলিঙ্গ; ‘দৈবত’ শব্দ পুংলিঙ্গ ও ক্লীবলিঙ্গ ।

নরবাচক শব্দ পুংলিঙ্গঃ-

নরঃ, মানুষঃ, মনুষ্যঃ, মানবঃ প্রভৃতি।অসুরবাচক শব্দ পুংলিঙ্গঃ- অসুরঃ, দৈত্যঃ, দানবঃ, দনুজঃ, দেবারিঃ প্রভৃতি।

স্বর্গবাচক শব্দ পুংলিঙ্গঃ-

স্বর্গঃ, অমরালয়ঃ, নাকঃ, ত্রিদিবঃ, ত্রিদশালয়ঃ, সুরলোকঃ, দেবলোকঃ প্রভৃতি।

কিন্তু ‘স্বঃ’ অব্যয়, ‘দ্যো’ ও ‘দিব’ স্ত্রীলিঙ্গ এবং ‘ত্রিপিষ্টপ্’ শব্দ ক্লীবলিঙ্গ ।

যজ্ঞবাচক শব্দ পুংলিঙ্গঃ-

যাগঃ, যজ্ঞঃ, ক্রতুঃ প্রভৃতি।

পর্বতবাচক শব্দ পুংলিঙ্গঃ-

পর্বতঃ, গিরিঃ, অদ্রিঃ, শৈলঃ, অচলঃ, ভূধরঃ, গোত্রঃ প্রভৃতি।

বৃক্ষবাচক শব্দ পুংলিঙ্গঃ-

বৃক্ষঃ, তরুঃ, দ্রুঃ, পাদপঃ, দ্রুমঃ, মহীরুহঃ, শাখী, বিটপী প্রভৃতি ।

কিন্তু ‘দারু’ শব্দ ক্লীবলিঙ্গ ও পুংলিঙ্গ ।

সময়বাচক শব্দ পুংলিঙ্গঃ-

কালঃ, সময়ঃ প্রভৃতি ।

কিন্তু ‘বেলা’ শব্দ স্ত্রীলিঙ্গ ।

অসিবাচক শব্দ পুংলিঙ্গঃ-

অসিঃ, খড়গঃ, কৃপাণঃ, করবালঃ ইত্যাদি ।

শরবাচক শব্দ পুংলিঙ্গঃ-

শরঃ, বাণঃ, সায়কঃ, ইষুঃ, কলম্বঃ প্রভৃতি।

শত্রুবাচক শব্দ পুংলিঙ্গঃ-

শত্রুঃ, অমিত্রঃ, অরিঃ, রিপুঃ, অরাতিঃ, বিপক্ষঃ, বৈরী প্রভৃতি ।

কণ্ঠবাচক শব্দ পুংলিঙ্গঃ-

কণ্ঠঃ, গলঃ প্রভৃতি।

কেশবাচক শব্দ পুংলিঙ্গঃ-

কেশঃ, চিকুরঃ, কুম্ভলঃ প্রভৃতি ।

মাসবাচক শব্দ পুংলিঙ্গঃ-

বৈশাখঃ, জ্যৈষ্ঠঃ, আষাঢ়ঃ, শ্রাবণঃ, ভাদ্রঃ, আশ্বিনঃ, কার্তিকঃ, অগ্রহায়ণঃ, পৌষঃ, মাঘঃ, ফাল্গুনঃ, চৈত্রঃ।

ঋতুবাচক শব্দ পুংলিঙ্গঃ-

ঋতুঃ, গ্রীষ্মঃ, হেমন্তঃ, শীতঃ, বসন্তঃ।

কিন্তু ‘বর্ষা’ শব্দ স্ত্রীলিঙ্গ ও সর্বদাই বহুবচন।

আবার ‘শরদ’ শব্দ স্ত্রীলিঙ্গ।

অগ্নিবাচক শব্দ পুংলিঙ্গঃ-

অগ্নিঃ, অনলঃ, পাবকঃ, বহ্নিঃ, হুতাশনঃ, দহনঃ প্রভৃতি ।

সর্পবাচক শব্দ পুংলিঙ্গঃ-

সৰ্পঃ, অহিঃ, পন্নগঃ, ভুজগঃ, ভুজঙ্গঃ, ভুজঙ্গমঃ, উরগঃ, ফণী, সরীসৃপঃ, বিষধরঃ, আশীবিষঃ প্রভৃতি ।

করবাচক শব্দ পুংলিঙ্গঃ-

(ক) কিরণবোধক শব্দঃ-

করঃ, কিরণঃ, রশ্মিঃ, অংগুঃ, ময়ুখঃ প্রভৃতি ।

তবে ‘মরীচি’ শব্দ পুংলিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গ ।

(খ) হাতবোধক শব্দঃ-

করঃ, হস্তঃ, পাণিঃ প্রভৃতি ।

(গ) রাজস্ববোধক শব্দঃ-

করঃ, বলিঃ প্রভৃতি ।

বায়ুবাচক শব্দ পুংলিঙ্গঃ-

বায়ুঃ, পবনঃ, গন্ধবহঃ, সমীরঃ, সমীরণঃ, মারুতঃ, প্রভঞ্জনঃ প্রভৃতি ।

(৩) শব্দের শেষে ‘রু’ থাকলে শব্দটি পুংলিঙ্গ হয় । যেমন— মেরুঃ, মরুঃ, তরুঃ, শত্রুঃ প্রভৃতি ।

কিন্তু ‘দারু’ শব্দ পুংলিঙ্গ ও ক্লীবলিঙ্গ । ‘অশ্রু’ ও ‘শ্মশ্রু’ শব্দ ক্লীবলিঙ্গ ।

(৪) শব্দের শেষে ‘তু’ থাকলে শব্দটি পুংলিঙ্গ হয় । যেমন— সেতুঃ, ক্রতুঃ প্রভৃতি ।

(৫) শব্দের শেষে ‘ধি’ থাকলে শব্দটি পুংলিঙ্গ হয় । যেমন – বিধিঃ, নিধিঃ, আধিঃ, জলধিঃ, উদধিঃ, সন্ধিঃ, পয়োধিঃ, বারিধিঃ, ব্যাধিঃ, জলনিধিঃ প্রভৃতি ।

কিন্তু ‘ইষুধি’ শব্দ পুংলিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গ ।

(৬) সাধারণত কোনও ক্রিয়া দ্বারা যা করা বা হওয়া বোঝায় –

(ক) সেই শব্দের শেষে তি/নি থাকলে স্ত্রীলিঙ্গ এবং ন/ণ থাকলে ক্লীবলিঙ্গ হয়।

(খ) সেই শব্দটির শেষে তি/নি এবং ন/ণ না থাকলে শব্দটি পুংলিঙ্গ হয়।

যেমন – পড়া (পঠ্ ধাতু) = পাঠ / পঠন করা । পাঠ = পুংলিঙ্গ । পঠন = ক্লীবলিঙ্গ ।

এরকম –

কিছু পুংলিঙ্গ শব্দঃ-

পাঠঃ, পাতঃ, লাভঃ, বাসঃ, নাশঃ, ভোগঃ, লোভঃ, পাকঃ, ত্যাগঃ, ভাগঃ, হারঃ, রাগঃ, ভঙ্গঃ, স্তবঃ, রোষঃ, বোধঃ, ক্রোধঃ, মোহঃ, জয়ঃ, হৰ্ষঃ, ক্ষয়ঃ, কোপঃ, আশ্রয়ঃ প্রভৃতি ।

কিন্তু ‘ভয়’ শব্দ ক্লীবলিঙ্গ ।

কিছু স্ত্রীলিঙ্গ শব্দঃ-

প্ৰীতিঃ, জাতিঃ, ভীতিঃ, স্মৃতিঃ, নীতিঃ, শক্তিঃ, হানিঃ, গ্লানিঃ প্রভৃতি।

তবে ‘জ্ঞাতি’ শব্দটি পুংলিঙ্গ ।

কিছু ক্লীবলিঙ্গ শব্দঃ-

পঠনম্, গমনম্, শ্রবনম্, দর্শনম্, ভোজনম্, নৰ্তনম্, পানম্, দানম্, রোদনম্, ক্রন্দনম্, শয়নম্, আগমনম্, চয়নম্ প্রভৃতি।

(৭) সাধারণত অ-কারান্ত শব্দের শেষ অক্ষরটি ক, ট, ণ, থ, ন, প, ভ, ম, য (য়), র, শ, ষ বা স থাকলে শব্দগুলি পুংলিঙ্গ হয়।

যেমন –

ক = শাকঃ, পাকঃ, নাকঃ, শোকঃ, লোকঃ, ত্রিলোকঃ প্রভৃতি।

ট = ঘটঃ, পটঃ, বটঃ, নটঃ, শকটঃ প্রভৃতি।

ণ = গুণঃ, পাষাণঃ, প্ৰাণাঃ প্রভৃতি।

থ = অর্থঃ, রথঃ, প্রমথঃ, নাথঃ।ন = ফেনঃ স্তেনঃ, শোনঃ।

প = ধূপঃ, দীপঃ, ভূপঃ, নৃপঃ।

ভ = কুম্ভঃ, ঋষভঃ, বৃষভঃ।

ম = সোমঃ, ধূমঃ, গ্রামঃ।

য় = (য) সময়ঃ, হয়ঃ, প্রণয়ঃ।

র = দ্বাপরঃ, ক্ষুরঃ, ময়ূরঃ, ছাত্রঃ।

শ = নাশঃ ।ষ = কৃষঃ, দোষঃ।

স = রসঃ, বায়সঃ, হংসঃ।

কিন্তু এ জাতীয় শব্দের অনেক ব্যতিক্রম আছে। সেগুলিও বিশেষভাবে মনে রাখা দরকার।

এরকম কিছু ক্লীবলিঙ্গ শব্দ হল

  • (ক) পুষ্প, রূপ, শিল্প, শম্প, সমীপ।
  • (খ) মুকুট, কিরীট।
  • (গ) তৃণ, প্রমাণ।
  • (ঘ) বেতন, বর্তন, শ্মশান, রত্ন, সোপান, ভুবন, চিহ্ন।
  • (ঙ) অংশুক, চিবুক।
  • (চ) হৃদয়, ইন্দ্রিয়, মাণিক্য, ব্য, ধান্য, মূল্য, শস্য, কিশলয়, উত্তরীয়।
  • (ছ) শরীর, জঠর, উদর, সূত্র, প্রান্তর, জ্বর, বস্ত্র, নক্ষত্র, ছত্র, ক্ষেত্র, শাস্ত্র, শস্ত্র, অস্ত্র, চিত্র।
  • (জ) পীযূষ।
  • (ঝ) কুসুম, যুগ্ম প্রভৃতি।

(৮) প্রাণ ও দার (পত্নী) শব্দ পুংলিঙ্গ ও সর্বদাই বহুবচন।

(৯) যেসব শব্দের শেষে ইমন থাকে (অর্থাৎ ইমনিচ্-প্রত্যয়ান্ত শব্দ) সেগুলি পুংলিঙ্গ । যেমন – মহিমন্, গরিমন, লঘিমন্, নীলিমন প্রভৃতি। তবে ‘প্রেমেন্’ শব্দ পুংলিঙ্গ ও কীবলিঙ্গ ।

(১০) সময়জ্ঞাপক শব্দ পুংলিঙ্গঃ-সর্বরাত্র, পূর্বরাত্র, মধ্যরাত্র, অর্ধরাত্র, পূর্বাহ্ণ, মধ্যাহ্ন, প্রাহ্, অপরাহ্ণ, সায়াহ্ন, শুভাহ্ন শব্দগুলি পুংলিঙ্গ ।

তবে ‘পুণ্যাহ’ শব্দ ক্লীব লিঙ্গ ।

(১১) ‘মিত্র’ শব্দ সূর্য অর্থে পুংলিঙ্গ, কিন্তু বন্ধু অর্থে ক্লীবলিঙ্গ ।

স্ত্রীলিঙ্গ শব্দ চেনার উপায়ঃ-

(১) যেসব শব্দ দ্বারা স্ত্রী জাতি বোঝায়, সেই শব্দগুলি স্ত্রীলিঙ্গ।

(২) আ-কারান্ত শব্দ সাধারণত স্ত্রীলিঙ্গ হয়।

যেমন – লতা, অম্বা, জরা, অঙ্গনা, করুণা, কবিতা, কৃপা, ক্ষুধা, গাথা, মালা, মালিকা, গুহা, ঘৃণা, চেষ্টা, জনতা, জিহ্বা, দেবতা, ভাষা, মহিলা, রেখা, লজ্জা, বসুধা, শয্যা, বর্ষা, সভা, সুধা, নাসিকা, নিশা, ঊষা প্রভৃতি।

কিন্তু

(ক) কোনও পুরুষের আ-কারান্ত নাম।

(খ) বিশ্বপা, বলদা প্রভৃতি সমাসবদ্ধ আ-কারান্ত পুরুষবোধক শব্দ।

(গ) ইমনিচ্ প্রত্যয়ান্ত শব্দ যা বাংলায় লঘিমা, গরিমা প্রভৃতি রূপে ব্যবহৃত (প্রকৃতপক্ষে ১মা বিভক্তির একবচনের রূপ)।
(ঘ) দাতা, পিতা, ভ্রাতা, কর্তা, নেতা, শ্রোতা, সবিতা, স্রষ্টা প্রভৃতি বাংলা শব্দ— যেগুলি প্রকৃতপক্ষে ঋ-কারান্ত শব্দের ১মা বিভক্তির একবচনের রূপ।

(ঙ) বাংলায় ব্যবহৃত রাজা, আত্মা, ব্রহ্মা, যক্ষ্মা, যুবা [ সংস্কৃতে রাজন, আত্মন, ব্রহ্মান, যক্ষ্মন, যুবন্ ] শব্দগুলি পুংলিঙ্গ।

(৩) সাধারণত ঈ-কারান্ত শব্দগুলি স্ত্রীলিঙ্গ।

যেমন— নদী, শ্রী, ধী, স্ত্রী, পত্নী, অঙ্গুলী, অটবী, কদলী, কবরী, কৌমুদী, দেবী, যামিনী, বিভাবরী, জননী, রজনী, পৃথিবী, মহী, ধরিত্রী, লেখনী, মসী, ধাত্রী প্রভৃতি।

কিন্তু সুধী, সেনানী, অগ্রণী, গ্রামণী, সুখী প্রভৃতি শব্দগুলি পুংলিঙ্গ।

(৪) প্রতিভূ, স্বয়ত্ত্ব প্রভৃতি দু’চারটি শব্দ বাদে যাবতীয় উ-কারান্ত শব্দ স্ত্রীলিঙ্গ। যেমন— বধূ, সরযূ, ভূ, প্রসু প্রভৃতি।

(৫) যেসব শব্দের শেষে তল্ প্রত্যয়ের ‘তা’ থাকে সেই শব্দগুলি স্ত্রীলিঙ্গ। যেমন মৃদুতা, পটুতা, লঘুতা, ধৃষ্টতা, মত্ততা, সত্তা প্রভৃতি।

পিতা, ভ্রাতা, নেতা, সবিতা, জামাত প্রভৃতি শব্দগুলি প্রকৃতপক্ষে ঋ-কারান্ত পুংলিঙ্গ শব্দ।

(৬) ঊনবিংশতি [ ১৯ ] থেকে অষ্টানবতি [ ১৮ ] পর্যন্ত শব্দগুলি স্ত্রীলিঙ্গ।

(9) মি. নিওতি শেষে থাকলে শব্দগুলি প্রায়ই স্ত্রীলিঙ্গ হয়। যেমন- মি=ভূমি। [ তবে ‘তিমি’ শব্দ পুংলিঙ্গ।]

ণি/নি = ক্ষেপণি, শ্রেণি, সরণি, গ্লানি, হানি প্রভৃতি। [ তবে ধ্বনি, পাণি, বহ্নি, অগ্নি শব্দ

তি = উন্নতি, কান্তি, মতি, গতি, প্রণতি, আরতি, মূর্তি, ব্রততি, শাস্তি, শ্ৰুতি, ক্ষতি, ভ্রাপ্তি প্রভৃতি।

তবে পতি, অরাতি, যতি, জ্ঞাতি শব্দ পুংলিঙ্গ।

তিথিবাচক শব্দ স্ত্রীলিঙ্গ।

যেমন— প্রতিপদ, দ্বিতীয়া, পূর্ণিমা, অমাবস্যা প্রভৃতি।

(৯) অপ্ (জল), সিকতা (বালি), বর্ষা (বর্ষাকাল) স্ত্রীলিঙ্গ ও সর্বদাই বহুবচন। (১০) আশিস্ (আশিষ) শব্দ স্ত্রীলিঙ্গ।

(১১) নদীবাচক, বিদ্যুৎবাচক, লতাবাচক, রাত্রিবাচক ও পৃথিবীবাচক শব্দগুলি স্ত্রীলিঙ্গ। নদীবাচক— নদী, সরিৎ, তরঙ্গিণী, স্রোতস্বিনী, তটিনী, প্রবাহিণী, নির্ঝরিণী, স্রোতস্বতী
যেমন
প্রভৃতি।
বিদ্যুৎবাচক বিদ্যুৎ, ঋণপ্রভা, তড়িৎ, চপলা, চঞ্চলা, সৌদামিনী, শম্পা প্রভৃতি। লতাবাচক— লতা, লতিকা, বল্লী, বল্লরী, ব্রততি, ব্রততী প্রভৃতি।
রাত্রিবাচক— রাত্রি, রাজী, নিশা, রজনী, যামিনী, ত্রিযামা, শবরী, বিভাবরী প্রভৃতি। পৃথিবীবাচক— পৃথিবী, ভূমি, ভূ, ধরা, ধরিত্রী, মহী, পৃথ্বী, অচলা, বসুন্ধরা, বসুধা, ক্ষিতি, অবনি, অবনী, মেদিনী প্রভৃতি।
(১২) আপদ, বিপদ্ ও সম্পদ শব্দ স্ত্রীলিঙ্গ।

(১৩) দিক্‌ নির্দেশক – পূর্ব, পশ্চিমাদি শব্দ স্ত্রীলিঙ্গ।

ক্লীবলিঙ্গ শব্দ চেনার উপায়ঃ-

(১) যেসব শব্দ দ্বারা স্ত্রী জাতি বা পুরুষ জাতিকে না বুঝিয়ে অন্য কোনও কিছুকে বোঝায়, সেই শব্দগুলি ক্লীবলিঙ্গ।

(২) গগন, ছিদ্র, জল, রক্ত, ধন, অরণ্য, হিম, মুখ, সৈন্য, বিশেষ ফল, আহার্য, বিশেষ খাদ্যবাচক, পত্র, মাংস, নেত্র, স্বর্ণ, পুষ্প, বিশেষ পুষ্পবাচক শব্দ ক্লীবলিঙ্গ হয়। যেমন—

গগনবাচক—

গগনম্, অন্তরীক্ষম, নভঃ, খম্ প্রভৃতি। [‘আকাশ’ শব্দ পুংলিঙ্গ ও ক্লীবলিঙ্গ।] ছিদ্ৰবাচক– ছিদ্ৰম, কুহরম্, বিলম্‌, বিবরম, রম্। [ ‘গুহা’ শব্দ স্ত্রীলিঙ্গ।]

জলবাচক— জলম, সলিলম, বারি, উদকম, পয়ঃ, অম্বু, অন্তঃ প্রভৃতি। [ ‘অপ্’ শব্দ
স্ত্রী ]

রক্তবাচক

রক্তম, শোণিতম, রুধিরম্ প্রভৃতি।

ধনবাচক

ধনম, বিত্তম, দ্রবিণম্। [ ‘সম্পদ’ শব্দ স্ত্রীলিঙ্গ। ]

অরণাবাচক— অরণ্যম্, বনম্, কাননম্, বিপিনম্, গহনম্ প্রভৃতি।

‘বনানী’, ‘অরণ্যানী শব্দ স্ত্রীলিঙ্গ।

হিমবাচক–

হিমম্, তুহিনম্ প্রভৃতি।

‘তুষার’ শব্দ পুংলিঙ্গ।

মুখবাচক— মুখম্, আননম্, আসাম্, বদনম্, বক্তম্ প্রভৃতি।

সৈন্যবাচক— সৈন্যম্, বলম্, সামর্থ্যাম্ প্রভৃতি। [ ‘সেনা’ শব্দ স্ত্রীলিগ। ‘সেনানী শব্দ

বিশেষ ফলবাচক

আশ্রম, পনসম্, বিশ্বম্ প্রভৃতি।

‘দ্রাক্ষা’, ‘হরিতকী’, ‘আমলকী’ শব্দ স্ত্রীলিঙ্গ।

আহার্যবাচক— আহার্যম্, ভোজ্যম্, খাদ্যম্, পানীয়ম্, অন্নম্, অশনম্ প্রভৃতি।

বিশেষ খাদ্যবাচক— ব্যঞ্জনম্, দুগ্ধম্, দধি, তক্রম্, ঘৃতম্ প্রভৃতি।

পত্রবাচক

পর্ণম্, পত্রম্ প্রভৃতি।

মাংসবাচক

মাংসম্, পলম্, আমিষম্, পিশিতম্ প্রভৃতি। নেত্রবাচক– নেত্রম্, নয়নম্, চক্ষুঃ, অক্ষি প্রভৃতি।

স্বর্ণবাচক—

স্বর্ণম্, হেমম্, সুবর্ণম্, কাঞ্চনম্ প্রভৃতি।

পুষ্পবাচক–

পুষ্পম্, কুসুমম্, প্রসূনম্ প্রভৃতি।

কিন্তু ‘সুমনস্’ শব্দ স্ত্রীলিঙ্গ ও সর্বদা বহুবচন। ]

বিশেষ পুষ্পবাচক পদ্মম্, কুমুদম্, অরবিন্দম্, অশোকম্, চুতম্, উৎপলম, শিরীফ, কূটজম্, গন্ধরাজম্ প্রভৃতি।

কিন্তু জবা, মল্লিকা, যুথী, জাতী, মালতী প্রভৃতি শব্দ স্ত্রীলিঙ্গ।

(৩) ল্যুট্‌ (অনট্) প্রত্যয়ান্ত শব্দ ক্লীবলিঙ্গ। কোনও ক্রিয়া দ্বারা যা করা বোঝায় তার শেষে ন/ণ থাকলে শব্দটি ক্লীবলিঙ্গ।

যেমন— যাওয়া = গমন করা (Vগম্ + ল্যুট্‌ = গমন)। ‘গমন’ শব্দ ক্লীবলিঙ্গ।

এরকম শব্দ – আগমন, শ্রবণ, দর্শন, পান, ভোজন, নর্তন, ক্রন্দন, মোক্ষণ, দান, রোদন, শয়ন, গ্রহণ, বর্জন প্রভৃতি।

(৪) ব্রহ্মান্‌ শব্দ পুংলিঙ্গ ও ক্লীবলিঙ্গ।

(৫) ক্রিয়াপদের বিশেষণ ক্লীবলিঙ্গ (দ্বিতীয়া বিভক্তির একবচন) হয়। যেমন—সা দ্রুত ধাবতি।

(৬) অব্যয় পদের বিশেষণ ক্লীবলিঙ্গ হয়। যেমন— রমণীয়ম্ প্রাতঃ। মনোহরম্ দিবা।

(৭) ভাববাচ্যে জ, তব্য, অনীয় প্রভৃতি প্রত্যয়যুক্ত ক্রিয়াপদ ব্যবহৃত হলে ক্রিয়াপদটি সর্বদাই ক্লীবলিঙ্গ (এবং ১মা বিভক্তির ১বচন) হয়।

যেমন— ময়া গতম্। ছয় গম্ তেন গমনীয়ম্ প্রভৃতি।

Leave a Comment