বচন কাকে বলে ? বচনের শ্রেণীবিভাগ, একবচনের ব্যবহার, দ্বিবচনের ব্যবহার, বহুবচনের ব্যবহার, বচনভেদে অর্থের ভিন্নতা প্রভৃতি দিক তুলে ধরা হল ।
Table of Contents
সংস্কৃত বচন
বচনের সংজ্ঞাঃ-
যার দ্বারা এক, দুই বা দুইয়ের বেশি সংখ্যার বোধ জন্মায় তাকে বলে বচন ।
বচনের শ্রেণীবিভাগঃ-
সংস্কৃত ভাষায় বচন তিনটি । যথা –
১. একবচন,
২. দ্বিবচন
৩. বহুবচন ।
১. একবচনঃ-
যার দ্বারা কোনও ব্যক্তি, বস্তু বা প্রাণীর একটিকে বোঝায় তাকে একবচন বলে ।
যেমন – নরা, মুনিঃ, ফলম, রামঃ, লতা প্রভৃতি ।
দ্বিবচনঃ-
যার দ্বারা কোনও ব্যক্তি, বস্তু বা প্রাণীর দুটিকে বোঝায় তাকে দ্বিবচন বলে ।
যেমন – নরৌঃ, মুনীঃ, ফলে, লতে প্রভৃতি ।
বহুবচনঃ-
যার দ্বারা দুইয়ের বেশি ব্যক্তি, বস্তু বা প্রাণীকে বোঝায় তাকে বহুবচন বলে ।
যেমন – রাঃ, মুনয়ঃ, ফলানি, লতাঃ প্রভৃতি ।
বিশেষ্য, সর্বনাম, বিশেষণ ও ক্রিয়া পদের বচন ভেদে রূপভেদ হতে পারে। অব্যয় পদের রূপের পরিবর্তন হয় না । যেমন –
বিশেষ্য – নরঃ, নরৌ, নরায় ।
সর্বনাম – সহ, তৌ, তে
বিশেষণ – সুন্দরা নরঃ, সুন্দরৌ নরৌ, সুন্দরাঃ নরায় ।
ক্রিয়া – নরঃ বদতি, নরৌ বদতা, নরাঃ বদন্তি ।
একবচনের ব্যবহারঃ-
(১) জাতি বোঝাতে একবচন ব্যবহৃত হয় ।
যেমন – সিংহা, নরম, মনুষ্যঃ, বিষণা প্রভৃতি ।
(২) ব্যক্তি, বস্তু বা প্রাণীর একজন বা একটিকে বোঝাতে একবচন ব্যবহৃত হয় ।
যেমন – রামঃ বদতি। নরঃ হসতি। ফলম্ পততি প্রভৃতি।
(৩) ছায়, দ্বিতয়, যুগ, যুগল, মিথুন, হন্য – শব্দগুলি দুই-সংখ্যাবোধক হলেও সাধারণত ক্লীবলিঙ্গের একবচনেই ব্যবহৃত হয় ।
যেমন –
বালিকাদ্বয়ম্ হসতি,
বালিকান্বিতয়ম্ হসতি,
মম পাদযুগম্ অস্তি,
ইদম্ তব বাহুযুগলম্ প্রভৃতি ।
(৪) তিন-সংখ্যাবোধক ব্রয় ও ব্রিতয়, চারসংখ্যাবোধক চতুষ্টয় শব্দগুলি অর্থের দিক থেকে বহুবচন হলেও ক্লীবলিঙ্গের একবচনেই এদের ব্যবহার করা হয় ।
যেমন –
শিবস্য নেত্রম্ অস্তি,
অৱ বৃচতুষ্টয়ম্ ভবতি প্রভৃতি।
(৫) , মণ্ডল, সমূহ, বর্গ, কুল, বৃন্দ প্রভৃতি কোনও শব্দের পরে যুক্ত হলে বহুবচনের অর্থ বোঝালেও শব্দগুলি সাধারণত একবচনেই ব্যবহৃত হয়।
যেমন- বালিকাগণঃ পদ্ধতি, নামগুলা বাড়ি, মানবসমূহ্য পদ্ধতি প্রভৃতি। বহুবচনে ব্যবহার – ন চ তারাগনৈঃ অপি।
(৬) সমাহার, সমাহার থিও ও অব্যয়ীভাব সমাস করা হলে সমাসবদ্ধ পদগুলি সর্বদাই একবচন হয়।
যেমন— অহিনকুলম্, ত্রিভুবনম্, করচরণম্, চতুর্যুগম্, যথাসাধ্যম প্রভৃতি।
(৭) বিংশতি থেকে তার পরবর্তী সংখ্যাবোধক শব্দগুলি সর্বদাই একবচনে ব্যবহৃত হয়।
যেমন– বিংশতিঃ বালকাঃ, শতেন নীরা, সহস্রম্ পুষ্পাণি প্রভৃতি। [* কিন্তু আগে দুইবোধক
বিশেষণ (দ্বি) থাকলে দ্বিবচনে এবং দুইয়ের বেশি বোধক বিশেষণ (ত্রি, পঞ্চ, অনেক, বঙ্গ প্রভৃতি) থাকলে বহুবচনে ব্যবহৃত হয়। যেমন— বালকানাং দ্বে বিংশতিঃ, পুষ্পাণাং পঞ্চ সহস্রাণি প্রভৃতি। ]
(৮) ক্রিয়ার বিশেষণ সর্বদাই দ্বিতীয়া বিভক্তির একবচন হয়।
যেমন— অশ্বঃ দ্রুতং ধাবতি।
(৯) ভাববাচ্যের তিঙপ্ত ক্রিয়া সর্বদাই একবচন হয়।
যেমন— তেন হস্যতে, ময়া হস্যতে,
ত্বয়া গতম্ প্রভৃতি।
দ্বিবচনের ব্যবহারঃ-
(১) ব্যক্তি, বস্তু বা প্রাণীর দুজন বা দুটি বোঝাতে দ্বিবচন ব্যবহৃত হয়।
যেমন— নরৌ, লতে, বিহগৌ, ফলে প্রভৃতি।
(২) দ্বি, উভ, দম্পতি ও অশ্বিন্ শব্দগুলি সর্বদাই দ্বিবচন হয়।
যেমন – দ্বৌ বালকৌ, দ্বে বালিকে, দ্বে ফলে, উভৌ নরৌ, উভে বালিকে, উভে ফলে, দম্পতী গচ্ছতঃ, অশ্বিনৌ বদতঃ প্রভৃতি।
(৩) যা দুইটিই হয় (যেমন, হাত, পা, কান ইত্যাদি), তা বোঝাতে দ্বিবচন হয়।
যেমন— হস্তৌ, পাদৌ, কর্ণৌ প্রভৃতি।
কিন্তু ইন্দ্রিয় বোঝাতে একবচন হয়। যেমন, বয়ম্ কর্ণেন শৃণুমঃ।
এবং **বিশেষ একটি বোঝালে হস্ত প্রভৃতি একবচন হয়।
যেমন, ময় বামঃ পাদঃ।
একশেষ-নিষ্পন্ন পদ— একজন স্ত্রী ও একজন পুরুষ বোঝালে— দ্বিবচনে ব্যবহৃত হয় ও তা পুংলিঙ্গ হয়।
যেমন— পিতরৌ (মাতা ও পিতা), পুত্রৌ (পুত্র ও কন্যা), ভ্রাতরৌ
(ভাই ও বোন), শ্বশুরৌ (শ্বশুর ও শ্বাশুড়ি), ভৃত্যৌ (ভৃত্য ও ভৃত্যা) প্রভৃতি।
(৫) অশ্বিনীকুমার, ওষ্ঠ, কুশীলব, দ্যাবাপৃথিবী, মিত্রাবরুণ প্রভৃতি কিছু শব্দ দ্বারা সর্বদাই দুই সংখ্যা বোঝায়। এগুলি দ্বিবচনেই ব্যবহৃত হয়।
বহুবচনের ব্যবহারঃ-
(১) দুইয়ের বেশি সংখ্যা বোঝাতে বহুবচন ব্যবহৃত হয়।
যেমন—নরাঃ, ফলানি, ন্যঃ প্রভৃতি।
(২) দার (পত্নী), অক্ষত (আতপ চাল), লাজ (খই), অসু (প্রাণ), প্রাণ (জীবন/Life), অপ্ (জল), সুমনস্ (ফুল), সমা (বৎসর), সিকতা (বালুকা) এবং বর্ষা (বৃষ্টি/বর্ষাঋতু)— শব্দগুলি সর্বদাই বহুবচনে ব্যবহৃত হয়।
(৩) ‘গৃহ’ শব্দ পুংলিঙ্গ হলে সর্বদাই বহুবচন। কিন্তু ক্লীবলিঙ্গ হলে ‘গৃহ’ শব্দ তিন বচনেই ব্যবহৃত হতে পারে।
যেমন— অত্র বহবঃ গৃহাঃ সত্তি। কিন্তু, ইদং গৃহম্।
(৪) প্রদেশবাচক শব্দগুলি প্রায়ই বহুবচনে ব্যবহৃত হয়।
যেমন— বঙ্গেষু, অঙ্গেষু, কলিঙ্গানাম্ প্রভৃতি।
কিন্তু প্রদেশবাচক শব্দের পরে দেশ, প্রদেশ, বিষয় প্রভৃতি যুক্ত থাকলে একবচন হয়।
যেমন— অঙ্গদেশে, পশ্চিমবঙ্গ-প্রদেশে প্রভৃতি।
(৫) ‘কেউ কেউ’ অর্থ বোঝালে ‘এক’ শব্দ বহুবচনে ব্যবহৃত হয়।
যেমন— একে (কেউ কেউ বলেন)। রূপ ‘সর্ব’ শব্দের মতো হয়।
(৬) গৌরব বোঝালে অনেক সময় একবচন বা দ্বিবচনের স্থানে বহুবচন হয়।
যেমন— শ্রীচরণেষু, শ্রীচরণকমলেষু, কল্যাণীয়াসু, ইদং ভবতাম্ (আপনার) অভিমতম্ প্রভৃতি।
(৭) বংশের সকলকে বোঝাতে সেই বংশের কোনও ব্যক্তির নাম বহুবচনে ব্যবহৃত হয়।
যেমন— রামচন্দ্রাঃ (রামচন্দ্রের বংশের সবাই), রঘবঃ (রঘুবংশীয়গণ)।
(৮) ত্রি থেকে অষ্টাদশন পর্যন্ত সংখ্যাবাচক শব্দগুলি বহুবচনে ব্যবহৃত হয়।
(৯) কতি (কত) শব্দ সর্বদাই বহুবচন। যেমন— কতি বালকাঃ গচ্ছত্তি।
(১০) অপ্সরস্ শব্দ সাধারণত বহুবচনেই ব্যবহৃত হয়। কদাচিৎ একবচনে প্রয়োগ দেখা যায়।
(১১) অনেক (Many) শব্দ সর্বদাই বহুবচনে ব্যবহৃত হয়।
যেমন— অনেকে বদন্তি, অনেকে বৃক্ষাঃ প্রভৃতি। ‘সর্ব’ শব্দের মতো রূপ হয়।
বচনভেদে অর্থের ভিন্নতাঃ-
(ক) ‘প্রাণ’ শব্দ জীবন অর্থে সর্বদাই বহুবচন; কিন্তু ইন্দ্রিয় বোঝালে একবচন হয়।
(খ) ‘এক’ শব্দ ‘১’ সংখ্যাটি বোঝালে একবচন; ‘কেহ কেহ’ অর্থ বোঝালে বহুবচন হয়।
(গ) কোনও শব্দের শেষে গণ, মণ্ডল প্রভৃতি থাকলে এবং শব্দটি একবচনে ব্যবহৃত হলে মূল শব্দটির বহুসংখ্যকত্ব বোঝায়।
কিন্তু গণ প্রভৃতিযুক্ত শব্দ বহুবচনে ব্যবহৃত হলে সে রকম ভিন্ন ভিন্ন দল বোঝায়।
যেমন— পক্ষিযুগলম্ (দুটি পাখি), পক্ষিযুগলানি (অনেকগুলি জোড়া জোড়া পাখি); নরগণঃ (মানুষেরা); নরগণাঃ (মানুষের অনেকগুলি দল) প্রভৃতি।
(ঘ) কর্ণ, চক্ষুস্, নেত্র প্রভৃতি শব্দ সাধারণভাবে অঙ্গ বোঝাতে দ্বিবচন।
কিন্তু দুটির কোনও একটি বা ইন্দ্রিয় বোঝাতে একবচন হয়।
(ঙ) কোনও ব্যক্তির নাম একবচনে ব্যবহৃত হলে সেই ব্যক্তিকেই বোঝায়; কিন্তু বহুবচনে ব্যবহৃত হলে ব্যক্তির বংশের সকলকে বোঝায়।
(চ) পুরুষবাচক পুংলিঙ্গ শব্দ একবচনে কেবল সম্বকেই বোঝায়, দ্বিবচনে দুইজন পুরুষ অথবা একজন পুরুষ ও তার স্ত্রীলিঙ্গ শব্দ বোঝায় এবং বহুবচনে সেই পুরুষের অনেক সংখ্যা বোঝায়।
যেমন— পিতা (একজন পিতা), পিতরৌ (দুইজন পিতা অথবা একজন পিতা ও একজন মাতা), পিতরঃ (অনেক পিতা)।