সংজ্ঞা ও পরিভাষা

সংস্কৃত ব্যাকরণের সংজ্ঞা ও পরিভাষা থেকে ইৎ, গুণ, ব্যৃদ্ধি, লঘু, গুরু, সবর্ণ, টি, উপধা, গতি, নিপাত, সম্প্রসারণ, প্রাতিপদিক, নদী, ঘ, ঘি, ঘু, অনুবৃত্তি প্রভৃতির সংজ্ঞা ।

ব্যাকরণের সংজ্ঞা ও পরিভাষা

ইৎ, গুণ, ব্যৃদ্ধি প্রভৃতি পরিভাষা গুলির উদাহরণ সহযোগে সংজ্ঞা দেওয়া হল ।

সংস্কৃত পরিভাষা ইৎ -এর সংজ্ঞা

১. ইৎঃ-

“কস্মৈচিৎ কার্যায়োচ্চর্যমাণো বর্ণ ইৎসংজ্ঞো ভবতি ।” অর্থাৎ কোনো কাজের জন্য যে বর্ণ উচ্চারিত হয়, কিন্তু কাজের সময় থাকে না, তার নাম হল ‘ইৎ’ ।

উদাহরণঃ-

অণ্ বললে অ, ই, উ এই তিনটি বর্ণকে বোঝায়, ণ্ কে বোঝায় না । ণ্ কেবলমাত্র অণ্ এই সংজ্ঞা নির্দেশ করার জন্য ব্যবহৃত হয় ; এখানে ণ্ ইৎ ।

সংস্কৃত পরিভাষা গুণ -এর সংজ্ঞা

২. গুণঃ-

অদেঙ্ গুণঃ ।” অর্থাৎ, ই ঈ স্থানে এ-কার, উ উ স্থানে ঔ-কার, ঋ ঋৃ স্থানে আদর এবং ৯ স্থানে অল্ হওয়াকে গুণ বলে ।

উদাহরণঃ-

সংস্কৃত পরিভাষা ব্যৃদ্ধি -এর সংজ্ঞা

৩. ব্যৃদ্ধি – “ব্যৃদ্ধিরাদৈচ্ ।” অর্থাৎ অ-কার স্থানে আ-কার, ই ঈ এবং এ-কার স্থানে ঐ-কার, উ উ এবং ঔ-কার, ঋ ঋৃ এবং ৯ স্থানে আল্ হওয়াকে ব্যৃদ্ধি বলে ।

উদাহরণঃ-

তদ্ধিত প্রত্যয় অণ্ প্রত্যয়ের ক্ষেত্রে শিব + অণ্ = শৈব । এখানে শিব পদটির ই কার শৈব পদে ঐ-কার হয়েছে । এই ঐ-কার হল ব্যৃদ্ধি ।

মনে রাখবেঃ-

“ব্যৃদ্ধিরাদৈচ্ ” এই সূত্রটি পাণিনি ব্যাকরণের প্রথম সূত্র ।

সংস্কৃত পরিভাষা সম্প্রসারণ -এর সংজ্ঞাঃ-

৪. সম্প্রসারণঃ-

“ইগ্ যণঃ সম্প্রসারণম্ ।” অর্থাৎ, য ব র ল বর্ণগুলিতে স্বরবর্ণের ধর্ম আছে । য্ ব্ র্ ল্ এই অর্ধস্বরগুলিকে সম্পূর্ণরূপে স্বরবর্ণে পরিণত করে এই বর্ণগুলির স্থানে যথাক্রমে ই উ ঋ ৯ করা হলে একে সম্প্রসারণ করা বলে ।

সংস্কৃত পরিভাষা সবর্ণ -এর সংজ্ঞা

৫.সবর্ণঃ-

যে সব বর্ণের উচ্চারণ স্থান এবং স্পৃষ্টত্ব প্রভৃতি প্রযত্ন সমান, তারা পরস্পর সবর্ণ । এজন্য একই উচ্চারণস্থানীয় স্বরবর্ণ পরস্পর সবর্ণ এবং উচ্চারণস্থানীয় ব্যঞ্জনবর্ণ পরস্পর সবর্ণ ।

মনে রাখবেঃ-

নাজ্ঝলৌ” সূত্রানুসারে স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণে সবর্ণতা হয় না ।

উদাহরণঃ-

  • (ক) অবর্ণ অর্থাৎ অ আ সবর্ণ ।
  • (খ) ইবর্ণ অর্থাৎ ই ঈ সবর্ণ ।
  • (গ) উবর্ণ অর্থাৎ উ ঊ সবর্ণ ।
  • (ঘ) ঋবর্ণ অর্থাৎ ঋ ঋৃ ৯ সবর্ণ ।

সংস্কৃত পরিভাষা ‘নিপাত’ -এর সংজ্ঞাঃ-

৬.নিপাতঃ-

(ক)” চাদয়োহসত্ত্বে ।” অর্থাৎ, দ্রব্য না বোঝালে এ প্রভৃতিকে নিপাত বলে ।

উদাহরণঃ-

চ, বা, বৈ, স্বধা, না, স্বাহা ইত্যাদি ।

(খ)”প্রাদয়ঃ ।” অর্থাৎ, প্র, পরা প্রভৃতি ২০ টি অব্যয়কেও নিপাত বলে ।

মনে রাখবেঃ-

নিরুক্তকার যাস্ক নিপাত শব্দটির অর্থের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেন –

“উচ্চাবচেষ্বর্থেষু নিপতন্তীতি নিপাতাঃ ।”

অর্থাৎ, যে শব্দগুলি নানাবিধ অর্থে নিপতিত হয়, তাহারাই নিপাত ।

সংস্কৃত পরিভাষা টি -এর সংজ্ঞা

৭. টিঃ-

“অচোহন্ত্যাদি টি ।” অর্থাৎ, শব্দের শেষে ব্যঞ্জনবর্ণ থাকলে সেই ব্যঞ্জনবর্ণ সমেত তার পূর্ববর্তী স্বরবর্ণকে নিয়ে সম্পূর্ণ অংশটিকে একসঙ্গে টি বলা হয় ।

উদাহরণঃ-

রাজন্ শব্দের শেষের অন্ অংশটি টি ।

সংস্কৃত পরিভাষা অনুবৃত্তি -এর সংজ্ঞাঃ-

৮. অনুবৃত্তিঃ-

পাণিনি রচিত ‘অষ্টাধ্যায়ী‘ ব্যাকরণে পূর্ববর্তী সমগ্র সূত্রের অথবা তার অংশ বিশেষের পরবর্তী সূত্রে বা সূত্রসমূহে গ্রহণের নাম অনুবৃত্তি ।

উদাহরণঃ-

“উপদেশহজনু-নাসিক ইয়ং” (১|৩|২) এই সূত্রটির পরবর্তী “হলন্ত্যম্” (১|৩|৩) সূত্রে পূর্বসূত্র হতে ‘ইৎ’ অংশটির অনুবৃত্তি করলে সূত্রটি সম্পূর্ণ হবে ।

সংস্কৃত পরিভাষা নদী -এর সংজ্ঞা

৯. নদীঃ-

“যূস্ত্র্যাখ্যৌ নদী ।” অর্থাৎ, ঈ-কারান্ত ও ঊ-কারান্ত স্ত্রীলিঙ্গ শব্দগুলি নদী সংজ্ঞা প্রাপ্ত হয় ।

উদাহরণঃ-

নদী, দেবী, বধূ, সরযূ ইত্যাদি ।

মনে রাখবেঃ-

“নেয়ঙুবঙ্স্থানাবস্ত্রী” সূত্রানুসারে ‘স্ত্রী’ এই শব্দটি ছাড়া যে সকল ঈ-কারান্ত ও ঊ-কারান্ত স্ত্রীলিঙ্গ শব্দের ক্ষেত্রে ইয়ঙ্ ও উবঙ্ হয়, তাদের নদী সংজ্ঞা হয় না ।

সংজ্ঞা পরিভাষা হতে জিজ্ঞাস্য (FAQ) ?

পরিভাষা বলতে কী বোঝ ?

যে শব্দের দ্বারা সংক্ষেপে কোনো বিষয়কে সুনির্দিষ্টভাবে বলা করা যায় তাকেই পরিভাষা বলা হয়। শব্দ হল যেকোনো কিছুর নাম বা ভাষায় প্রকাশ করার উপায়, কিন্তু পরিভাষা পুরোপুরিই সংজ্ঞাবাচক ।

Leave a Comment