চাণক্য শ্লোক বা নীতি প্রথম অধ্যায়

চাণক্য শ্লোক প্রথম অধ্যায় থেকে প্রার্থনা, ঈশ্বরতত্ত্ব, কি ত্যাগ কর্তব্য? চিন্তনীয় কাজ, সব সমান হয় না, ধর্মের প্রয়োজনীয়তা, সাধু দর্শন, কর্মফল, বর্তমানের কথা চিন্তনীয়,অপ্রয়োজনীয় মানুষ সম্পর্কিত চাণক্য শ্লোক তুলে ধরা হল।

Table of Contents

প্রথম অধ্যায় চাণক্য শ্লোক বা নীতি

চাণক্যশ্লোক বা নীতিপ্রথম অধ্যায়
জন্মখ্রিস্টপূর্ব ৩৭০ অব্দ
মৃত্যুখ্রিস্টপূর্ব ২৮৩ অব্দ
অন্যান্য নামকৌটিল্য, বিষ্ণুগুপ্ত
পেশাচন্দ্রগুপ্ত মৌর্য -এর উপদেষ্টা
উল্লেখযোগ্য কর্মঅর্থশাস্ত্র, চাণক্যশ্লোক বা নীতি
চাণক্য শ্লোক

প্রার্থনা বিষয়ক চাণক্য শ্লোক

প্রার্থনা বিষয়ক চাণক্য শ্লোক-১

প্রণম্য শিরসা বিষ্ণুঃ ত্রৈলোক্যাধিপতিং প্রভুম্।

নানাশাস্ত্রোদ্ভূতং বক্ষ্যে রাজনীতি সমুচ্চয়ম্ ॥

বাংলা অর্থঃ- এই ত্রিভুবনের মহাপ্রভু ভগবান শ্রীবিষ্ণুকে প্রণাম করে বহুবিধ শাস্ত্র থেকে সংগৃহীত মহান রাজনীতির বর্ণনা করছি।

প্রার্থনা বিষয়ক চাণক্য শ্লোক-২

কা চিন্তা মম জীবনে যদি হরির্বিশ্বম্ভর গীয়তে।

নো চেদৰ্ভ কজীবমার্থং জননীস্তন্যং কথং নিঃসরেৎ ॥

ইত্যালোচ্য মুহূর্মুহূষদুপতে লক্ষ্মীপতে কেবলং ।

ব্রপায়োদাম্বুজসেবনেন সততং কালো ময়ানীয়তে ৷

বাংলা অর্থঃ- যদি আমি বিশ্বম্ভর শ্রীহরির গুণকীর্তন করি তাহলে আমার জীবনে আর কি চিন্তা আছে। যদি ভগবান শ্রীহরির দয়া না থাকতো তাহলে শিশুদের জীবন রক্ষার্থে মাতৃপয়োধরে দুগ্ধ কিভাবে আসতো। সবই চিন্তাময়ের চিন্তায় ঘটিত। হে লক্ষ্মীপতি নারায়ণ আমি সর্বদা আপনার শ্রীচরণ চিন্তায় সময় অতিবাহিত করছি।

প্রার্থনা বিষয়ক চাণক্য শ্লোক-৩

ধর্ম্মে তৎপরতামুখে মধুরতা দানে সমুৎসাহতা ।

মিত্রেঽবঞ্চতা গুরৌ বিনয়তা চিত্তেঽপি গম্ভীরতা ।

আচারে শুচিতা গুণে রসিকতা শাস্ত্রেষু বিজ্ঞানতা ।

রূপে সুন্দরতা শিবে ভজনতা ত্বষ্যস্তি ভো রাঘবঃ।

বাংলা অর্থঃ- ধর্মে তৎপরতা, মুখের ভাষায় মধুরতা, দানকার্যে উৎসাহ, বন্ধু সাথে | কপটতাহীনতা, শ্রীগুরুর প্রতি বিনয়, চিত্তে গম্ভীরতা, আচরণে পবিত্রতা, গুণের প্রতি সমাদর, শাস্ত্র বিষয়ে জ্ঞান, রূপের সৌন্দর্যতা, শিবে ভক্তিরতা–হে রাঘব, এই সকল গুণ কেবল তোমার মধ্যেই দেখা যায়।

ঈশ্বরতত্ত্ব বিষয়ক চাণক্য শ্লোক

ঈশ্বরতত্ত্ব বিষয়ক চাণক্য শ্লোক-১

ন দেবো বিদ্যতে কাষ্ঠে ন পাষাণে ন মৃন্ময়ে।

ভাবে হি বিদ্যতে দেবস্তমাদ্ ভাবো হি কারণম্।

বাংলা অর্থঃ- ভগবান কাঠের মধ্যে, পাথরে, মাটির মধ্যে বা মূর্তির মধ্যে নেই, তিনি কেবল বিশ্বচিন্তায় বিরাজমান। অতএব চিন্তা বা ঈশ্বরে মনঃসংযোগ প্রধান কর্তব্য।

ঈশ্বরতত্ত্ব বিষয়ক চাণক্য শ্লোক-২

কাষ্ঠ পাষাণ ধাতুনাং কৃত্বা ভাবেন সেবনম্।

শ্রদ্ধয়া চ তথা সিদ্ধিস্তস্য বিষ্ণোঃ প্রসাদতঃ।

বাংলা অর্থঃ- কাঠ, পাথর ও ধাতুর মূর্তিকে সামনে রেখে ধ্যান অর্চনা ও জপ করলে এবং শ্রদ্ধা বিশ্বাস ভরে উপাসনা করলে ভগবানের কৃপাবলে সিদ্ধিলাভ করা যায়।

ঈশ্বরতত্ত্ব বিষয়ক চাণক্য শ্লোক-৩

পুষ্পে গন্ধং তিলে তৈলং কাষ্ঠে বহ্নি পয়োঘৃতম্ ।

ইক্ষৌ গুড়ং তথা দেহে পশ্যাত্মানং বিবেকতঃ।

বাংলা অর্থঃ- যেমন ফুলে গন্ধ, তিলে তৈল, কাঠে অগ্নি, দুধে ঘি ও আখের মধ্যে গুড় আছে, সেইরূপভাবে দেহেও পরমাত্মা বিরাজিত আছে, আমাদের প্রধান কর্তব্য তাঁকে বিশেষভাবে জানার।

ঈশ্বরতত্ত্ব বিষয়ক চাণক্য শ্লোক-৩

কলৌ দশ সহস্রানি হরিস্তজ্যতি মেদিনীম্।

তদর্থে জাহ্নবী তোয়ং তদর্ধে গ্ৰাম্যদেবতা।।

বাংলা অর্থঃ- কলিযুগের দশ হাজার বর্ষ বিগত হলে ভগবান পৃথিবী পরিত্যাগ করবেন, তার অর্ধেক সময়কালে গঙ্গাদেবী নিজ বারি ত্যাগ করবেন। তারও অর্ধেক সময়ে গ্রাম্যদেবতাগণ পৃথিবী ত্যাগ করে চলে যাবেন।

কি ত্যাগ কর্তব্য? এই বিষয়ক চাণক্য শ্লোক

ত্যজেদ্ধৰ্ম্ম দয়াহীনং বিদ্যা হীনং গুরু ত্যজেৎ।

ত্যজেৎক্রোধমুখী ভার্যান্নিঃ স্নেহাবান্ধবত্যজেৎ ॥

বাংলা অর্থঃ- বিদ্যাহীন গুরু, দয়াহীন ধর্ম, স্নেহহীন বন্ধু আর ক্রোধযুক্তা স্ত্রী পরিত্যাগ করা উচিত। কারণ বিদ্যাহীন গুরু শিষ্যকে সঠিক পথের সন্ধান দিতে পারে না। প্রীতিহীন বন্ধুও কোন উপকারে লাগে না। যে ধর্ম মানুষকে ধারণ করেন সেই ধর্ম যদি দয়াহীন হয়, সেই ধর্ম কোন কাজে লাগে না। প্রচণ্ড ক্রোধযুক্তা স্ত্রী সংসারে অমঙ্গল ঘটায় তার ফলে সংসারে অশান্তি ঘটে।

চিন্তনীয় কাজ বিষয়ক চাণক্য শ্লোক

কঃ কালঃ কানি মিত্রানি কো দেশঃ কৌ ব্যয়াগমৌ।

কস্যাহং কা চ মে শক্তিরিতি চিন্ত্যং মুহূর্মুহূ ॥

বাংলা অর্থঃ- কোন কাজ করার পূর্বে ভেবে চিন্তে করতে হবে। কাজ সম্পন্ন করার পর আর ভেবে চিন্তে লাভ নেই। কাজ করার পূর্বে ভাবতে হয় যে-কোন দেশ, কোন সময়, কে বা বন্ধু, কিবা আয় কিবা ব্যয়- নিজেরই বা শক্তি কত?

সব সমান হয় না বিষয়ক চাণক্য শ্লোক

একোদর সমুদ্ভূতা এক নক্ষত্র জাতকাঃ।

ন ভবন্তি সমাশীলে যথা বদরিকণ্টকাঃ ॥

বাংলা অর্থঃ- একই মাতৃগর্ভে জন্মলাভ করে এবং একই নক্ষত্রযোগে জাত হয়েও সকলের হৃদয়বৃত্তি সমান হয় না। সমান পরিবেশে জন্মগ্রহণ করে সমান গুণী হবার নিশ্চয়তা নেই। একেই বৃক্ষে ফুল ও কাঁটা বিদ্যমান কিন্তু সেই ফুল কাঁটার পার্থক্য অনেক।

ধর্মের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে চাণক্য শ্লোক

অনিত্যানি শরীরানি বিভবো নৈব শাশ্বতঃ ।

নিত্যং সন্নিহিতো মৃত্যু কৰ্তব্যো ধৰ্ম্ম সঞ্চয় ॥

বাংলা অর্থঃ- আমাদের এই দেহ অনিত্য অর্থাৎ জন্মগ্রহণ করলে মরতে হবে ধ্রুব সত্য। দেহধারী বস্তু বা প্রাণী মাত্রেই ক্ষণভঙ্গুর, বিষয় বৈভবও চিরস্থায়ী নয়। অবশ্যম্ভাবী মৃত্যু, অতএব সময় থাকতে ধর্মানুরাগী হওয়া উচিত। ১১ ৷৷

সাধু দর্শন সম্পর্কিত চাণক্য শ্লোক

সাধূনাং দর্শনাং পুণ্যং তীর্থভূতা হি সাধবাঃ।

কালেন ফলতে তীর্থঃ সদ্য সাধু সমাগমাঃ ॥

বাংলা অর্থঃ- সহস্র তীর্থ অপেক্ষা একজন সাধু দর্শনে বহুপুণ্য লাভ হয়। কারণ সাধুগণ ঈশ্বরের আপন ও প্রিয়জন। সাধুগণ কৃপা করলে পরম প্রেমময় ঈশ্বরও কৃপা করেন। তীর্থ দর্শনের ফল সব সময় পাওয়া যায় না। ১২ ৷৷

কর্মফল সম্পর্কিত চাণক্য শ্লোক

কৰ্ম্মায়ত্ত ফলং পুংসা বৃদ্ধি কৰ্ম্মানুসারিণী।

তথাপি সুধীযশ্চাৰ্য্যাঃ সুবিচার্য্যেব কুৰ্ব্বতে ॥

বাংলা অর্থঃ- কর্মানুযায়ী বুদ্ধিপ্রাপ্ত হয় এবং সেই অনুসারে ফললাভও হয়ে থাকে। কু কর্মের ফলে কু-বুদ্ধিলাভ ও সেরূপ কু-ফল লাভ হয়ে থাকে। সে কারণ জ্ঞানীগণ চিন্তা-ভাবনা করে কার্যে লিপ্ত হন। ১৩ ৷

বর্তমানের কথা চিন্তনীয় সম্পর্কিত চাণক্য শ্লোক

গতে শোকো ন কৰ্ত্তব্যো ভবিষ্যৎ নৈব চিন্তয়েৎ।

বর্তমানেন কালেন প্ৰবৰ্ত্তন্তে বিচক্ষণাঃ ॥

বাংলা অর্থঃ- যা হয়ে গেছে তার জন্য কোন শোক করে লাভ নেই। শোক করলে অতীত কোনোদিন ফিরবে না। ভবিষ্যৎ অনাগত। ভবিষ্যতের কথা ভাবিয়াও বিশেষ ফল হয় না। সর্বদা বর্তমানের কথা ভাবতে হবে। কারণ বর্তমানের উপর ভবিষ্যৎ নির্ভরশীল। তাই বুদ্ধিমান ব্যক্তিগণ বর্তমানের কথা চিন্তা করেন। ১৪ ॥

অপ্রয়োজনীয় মানুষ সম্পর্কিত চাণক্য শ্লোক

লোকযাত্রা ভয়ং লজ্জা দাক্ষিণ্যং ত্যাগশীলতা।

পঞ্চ যত্র ন বিদ্যন্তে ন কুৰ্য্যাতত্ৰ সংগতিম ৷৷

বাংলা অর্থঃ- যাহার শক্তি, ভয়, লজ্জা, ত্যাগ, দয়া নাই তার সাথে বাস করা উচিত নয়, কারণ সেই মানুষ কোন প্রয়োজনে লাগে না।

দুঃখ কি? সম্পর্কিত চাণক্য শ্লোক

মূর্খ শিষ্যোপদেশেন দুষ্টা স্ত্রী ভরনেন চ।

দুঃখিতে সংপ্রয়োগেন পণ্ডিতোহপ্যসীদতে ৷৷

বাংলা অর্থঃ- মূর্খ শিষ্যকে উপদেশ দান করে কোন ফল হয় না। কারণ মূর্খ উপদেশের মর্ম উপলব্ধি করতে পারে না। দুষ্টা স্ত্রীর ভরণ পোষণ করা দুঃখের

কারণ। ১৬ ॥

মৃত্যুর আশঙ্কাযুক্ত গৃহ সম্পর্কিত চাণক্য শ্লোক

দুষ্টা ভাৰ্য্যা শঠং মিত্রং ভৃত্যশ্চোত্তরদায়কঃ।

সসর্পে চ গৃহে বাস মৃত্যুরেব ন সংশয় ৷ ১৭ ৷৷

বাংলা অর্থঃ- যে গৃহে দুষ্টা ভাৰ্য্যা, কপটী বন্ধু এবং সর্বদা উত্তর দানকারী ভৃত্য বাস করে সেখানে সর্বদা মৃত্যুর আশঙ্কা বিদ্যমান থাকে। ১৭ ৷৷

আত্মরক্ষা সম্পর্কিত চাণক্য শ্লোক

আপদর্থে ধনং রক্ষেদ্দারান রক্ষেদ্ধনৈরপি ।

আত্মানাং সতত রক্ষেৎ দারৈরপি ধনৈরপি ॥ ১৮ ॥

বাংলা অর্থঃ- অসময়ের কথা ভেবে ধনরক্ষা বা অর্থসঞ্চয় করা একান্ত কর্তব্য, পত্নীকে রক্ষা করা স্বামীর কর্তব্য। কিন্তু আত্মরক্ষা করা তার অপেক্ষা শ্রেয় কাজ। অর্থ ও পত্নী রক্ষা অপেক্ষাও আত্মরক্ষা শ্রেষ্ঠ কাজ। ১৮ ॥

বাসপোযোগী স্থান নয় সম্পর্কিত চাণক্য শ্লোক

বাসপোযোগী স্থান নয় সম্পর্কিত চাণক্য শ্লোক- ১

যস্মিন দেশে ন সম্মানো ন বৃত্তির্ন ন চ বান্ধবাঃ ।

ন চ বিদ্যাগমোহপস্তি বাসং তত্র ন কারয়েৎ ॥

বাংলা অর্থঃ- যে স্থানে বা যে দেশে সম্মান, বন্ধু বা বিদ্যালাভ হয় না, জীবিকা অর্জনেরও কোন সুযোগ থাকে না, সে স্থান বাসের উপযোগী নয়।

বাসপোযোগী স্থান নয় সম্পর্কিত চাণক্য শ্লোক- ২

ধনিকঃ শ্রোত্রিয় রাজা নদী বৈদন্ত পঞ্চমঃ।

পঞ্চ যত্র ন বিদ্যতে ন তত্র দিবসং বসে ॥

বাংলা অর্থঃ- যে দেশে বা যে স্থানে ঋণদানকারী ধনী ব্যক্তি, বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ, জলদানকারী নদী, প্রশাসন ব্যবস্থা চালাবার জন্য কোন রাজা নাই, সে দেশ বা সে স্থান বাসযোগ্য নয়। বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ না থাকলে উপযুক্ত শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি হয় না, রাজা বা প্রশাসক না থাকলে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি হয়, নদী না থাকলে জলাভাবে কষ্ট পেতে হয়, বৈদ্য না থাকলে চিকিৎসার সুযোগ থাকে না, ঋণদানকারী ধনী না থাকলে অর্থাভাবের সময় ঋণ পাওয়া যায় না, সে স্থানে বাস করা বুদ্ধিমান ব্যক্তি মাত্রেরই অনুচিত।

উপযোগিতা ও স্বরূপ

জানীয়াৎ পেষণে ভৃত্যান্ বান্ধবান ব্যসনাগমে।

মিত্র চাপতকালে তু ভাৰ্য্যা চ বিভবক্ষয়ে ॥

কার্য দ্বারা ভৃত্যের সার্থকতা প্রমাণিত হয়। দুঃখের সময়ে আত্মীয় স্বজনকে চেনা যায়, বিপদকালে বন্ধুর পরিচয় পাওয়া যায় আর ধনহীন অবস্থায় পত্নীর প্রকৃত রূপ দেখা যায়।

প্রকৃত বন্ধু

উৎসবে ব্যসনে চৈব দুর্ভিক্ষে শত্রু সঙ্কটে।

রাজদ্বারে শ্মশানে চ যঃ তিষ্ঠতি স বান্ধব ॥

আনন্দ উৎসবে, রোগশোকে, অকাল সময়ে, শত্রু সঙ্কটে, রাজদ্বারে ও শ্মশান যাত্রার সময় যিনি সর্বদা সহায়তার হাত বাড়ান তিনি প্রকৃত বন্ধু।

নিশ্চিত গ্ৰহণীয়

যে ধ্রুবানি পরিত্যাজ্য অধ্রুবং পরিসেবতে।

ধ্রুবানি তস্য নশ্যন্তি অধ্রুবং নষ্টমের হি ৷৷

যিনি নিশ্চিত বস্তু পরিত্যাগ করে অনিশ্চিতের পথে গমন করেন তিনি নিশ্চিত-অনিশ্চিত উভয়ই হারিয়ে ফেলেন।

স্ত্রী বিষয়ক

বরয়েদকুলজাং প্রাজ্ঞা বিরূপামপি কন্যকাম ।

রূপশীলাং ন নীচস্য সদ্দশে কুলে ॥

সমান সমান কুলের কন্যা বিবাহ করা ভাল। কুরূপা উত্তম কুলজাত কন্যা সর্বদা বিবাহ করা ভাল কিন্তু রূপসী নীচ কুলজাত কন্যা বর্জনীয়। নীচকুল জাত কন্যা সর্বদা নীচমনা হয়ে থাকে।

বিশ্বাসভাজন নহে

নদীনাং শস্ত্রপানীনাং নখিনাং শৃঙ্গিনাং তথা।

বিশ্বাস নৈব কৰ্ত্তব্যং স্ত্রী রাজকুলেষু চ ॥

নখ বা শিং যুক্ত প্রাণী, রাজা বা রাজকর্মচারী, নদী, শস্ত্রধারী ও নারী— এদেরকে বিশ্বাস করা উচিত নয়।

গ্রহণীয়

বিষাদপ্যয়মৃতং গ্রাহ্যমমেধ্যাদপি কাঞ্চনম্।

নীচাদপ্যুত্তমাং বিদ্যাং স্ত্রীরত্ন দুষ্কৃলাদপি ॥

বিষ হতে অমৃত, অপবিত্র দ্রব্যগুলির মধ্যে স্বর্ণ, নীচ ব্যক্তি হতে শ্রেষ্ঠ বিদ্যা এবং দুস্কুল হতে উত্তমা স্ত্রীরত্ব সর্বদা গ্রহণীয়।

সংসার সুখ।

যস্য পুত্র বশীভূত ভাৰ্য্যা চন্দানুগামিনী।

বিভবে যস্য সন্তুষ্ট স্তস্য স্বৰ্গ ইহৈব হি ॥

পুত্র যার বাধ্য, পত্নী যার অনুগামিনী, যে ব্যক্তি অল্পে সন্তুষ্ট, সেই ব্যক্তি পৃথিবীতে স্বর্গসুখ ভোগ করে থাকে।

সাধনার ফল

ভোজ্যং ভোজনশক্তিশ্চ রতিশক্তির্ব্বরাঙ্গনা।

বিভব দানশক্তিশ্চ নান্নস্য তপসঃ ফলম্ ॥

উত্তম ভোজন, উত্তমা নারীলাভ, দানশক্তি, ভোজনশক্তি তথা রতিশক্তি— যে কেহ লাভ করতে পারে না। কারণ এগুলি লাভ করা বিশেষ সাধনার ফল। এগুলি সকলের পক্ষে লাভ করাও অসম্ভব। নিজ ভাগ্যে না থাকলে এগুলি লাভ হয় না।

স্ত্রীলোকের দোষ।

অনৃতং সাহসং মায়া মূর্খত্বমতিলোভতা।

অশৌচত্বং নিদয়ত্বং স্ত্রীনাং দোষা স্বভাবজাং ৷৷

স্ত্রীলোকের সাতটি স্বভাবদোষ আছে—মিথ্যাবাদিতা, অতি সাহস, ছলনা, মূর্খতা, অতি লোভ, অপবিত্রতা ও নির্দয় আচরণ। সময়ভেদে স্ত্রীলোক যতটা নির্দয় হতে পারে পুরুষ ততটা নির্দয় হয় না। তাই শাস্ত্রে আছে নারীগণ রহস্যময়ী।

পরিবারের সু কে?

তে পুত্ৰ যে পিতৃৰ্ভক্তা স পিতা যস্তু পোষকঃ।

তন্মিত্র যত্র বিশ্বাসঃ সা ভাৰ্য্যা যত্র নিবৃত্তিঃ ॥

তারা সু-পুত্র, যারা পিতৃভক্ত। সু-পিতা তিনি যিনি পুত্রদের আদরের সাথে লালন-পালন করেন। তিনিই প্রকৃত বন্ধু, যাকে বিশ্বাস করা যায়। তিনিই সুপত্নী, যিনি সুখ প্রদান করেন।

কার কাছে কি শিক্ষণীয়।

বিনয়ং রাজপুত্রেভ্যঃ পণ্ডিতেভ্যো সুভাষিতম্।

অত্যং দ্যুতকারেভ্যঃ স্ত্রীভঃ শিক্ষেচ্চ কৈবতম্ ॥

শিষ্টাচার বংশ গৌরবের উপর নির্ভরশীল, শিষ্টাচার শিখতে হলে রাজকুলোদ্ভব ব্যক্তির কাছে থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হয়। সুভাষণ একমাত্র পণ্ডিতগণ শিখাতে পারেন। পণ্ডিতের সুশব্দ ও যুক্তিগ্রাহ্য ভাষণের ক্ষমতা আছে। নারী ছলনাময়ী, অতএব কপটতা শিখতে হলে নারীর কাছে শিখতে হয়। আর মিথ্যা ভাষণ-জনিত কলাকৌশল শিখতে হলে জুয়াড়ীর কাছে শিক্ষা করা। উচিত। কারণ জুয়াড়ীগণ মিথ্যা ভাষণে পারদর্শী।

দুর্জন বার্তা

বয়সা পরিণামোঽপি যঃ খলঃ খলঃ এব সঃ।

সুপক্কন্নপি মাধুৰ্য্য নোপযাতীন্দ্র বারুণম্ ॥

দুর্জন ব্যক্তির বয়সে বাড়িলেও সাধুতা প্রকাশ পায় না, তখনও তার মধ্যে দুষ্টতা বিদ্যমান থাকে। যেমন ইন্দ্রবারুণ নামে একপ্রকার ফল পাকলেও মিষ্ট হয় না।

শীঘ্র বিনাশপ্রাপ্ত

অনালোক্য ব্যয়ং কৰ্ত্তা অনাথঃ কলহপ্রিয়ঃ।

আতুরঃ সর্ব্বক্ষেত্রেষু নরঃ শীঘ্রং বিনশ্যতি ॥ ৩৩ ॥

আয়ের সঙ্গে সঙ্গতি না রেখে যে জন নির্বিচারে ব্যয় করে থাকে অসহায় অবস্থায় সেই ব্যক্তি সর্বদা বিপদে পড়ে। যে ব্যক্তি সকল প্রকার স্ত্রী সম্ভোগ করে অচিরেই তার বিনাশপ্রাপ্ত হতে হয়।

সু-ব্যবহার

দাক্ষিণ্যং স্বজনে দয়া পরজনে শাঠ্যং সদা দুৰ্জ্জনে।

প্রীতি সাধুজনে স্ময়ঃ খলজনে বিদ্বজনে চাৰ্জ্জবম্ ॥

শৌর্য্যং শত্রুজনে ক্ষমা গুরুজনে নারীজনে ধূর্ততা।

ইত্থং যে পুরুষাঃ কলাসু কুশলাস্তেস্বেব লোকস্থিতি ॥

সকলের সাথে সম ব্যবহার চলে না, শঠের সাথে শাঠ্যতা, খলের সাথে অহংকারী মনোভাব, নারীর সাথে ছলনা, সাধুজনের সাথে সম্প্রীতি, বিদ্বানের সাথে সারল্য, শত্রুর সাথে বীরত্ব, আপনজনকে দাক্ষিণ্য, গুরুজনকে ক্ষমা এবং পরজনকে দয়া করা কাম্য। এরূপ ব্যবহারে মানুষ সংসারে উন্নতি করতে পারে।

Leave a Comment